ক্রোকোডাইল- যে ড্রাগ মাংস খায়! (দূর্বলচিত্তদের জন্যে না)

“আমার নাম ঝানা। আমি একজন রাশিয়ান নারী। আমি ক্রোকোডাইল ড্রাগসে আসক্ত। গত কয়েক বছর ধরে এই ড্রাগ নিচ্ছি আমি। এখন এটা ছাড়া কীভাবে বাঁচতে হয় আমার জানা নেই। মাঝে অবশ্য চেষ্টা করেছি কাজকর্ম করে নতুন জীবনে ফিরে যাবার। কিন্তু লাভ হয় নি। ক্ষতি যা হবার হয়ে গেছে। শারীরিক পরিশ্রমের কাজ আমার দ্বারা করা সম্ভব না। সে ক্ষমতা শেষ। বুদ্ধিবৃত্তিক কাজও অসম্ভব। চিন্তা করার ক্ষমতাই যে হারিয়ে ফেলেছি! এখন একটা কাজই পারি, তা হচ্ছে ঘরে বসে এই ড্রাগ তৈরি করা। এটা খুব ভালো পারি। বন্ধুরা আমার হাতের বেশ সুনাম করে। হায়, বন্ধুরা! শুরু করেছিলাম যাদের সাথে, তাদের সবাই মৃত। নিজ হাতে কবর দিয়েছি তাদের। জেলে থেকেছি কতদিন! এতকিছু দেখে এখন আর আমার কোনোকিছুতেই ভয় হয় না। ভয় পাবো কিসে, মৃত্যু? নেক্সট জোক প্লিজ! যে জীবন যাপন করছি, এর চেয়ে ভয়াবহ নিশ্চয়ই মৃত্যু হতে পারে না! ক্রোকোডাইল যখন শরীরে প্রবেশ করাই, প্রথম ধাক্কাতেই সব ভুলে যাই।  এই ক্রমাগত জীবনকে ভুলতে চাওয়া, এটাই আমার কাছে জীবন এখন। আমি জানি এ ছাড়া আমার আর কোনো পথ খোলা নেই। আমি জানি খুব ভয়ানক ভুগে মৃত্যু হবে আমার। ফেরার কোনো পথ নেই। মেনে নিয়েছি এই অবশ্যম্ভাবী পরিণতিকে”।

ঝানা একা নয়। রাশিয়াতে এরকম আরো অসংখ্য নর-নারী আছে যারা ক্রোকোডাইলে আসক্ত।  ক্রোকোডাইল এক ধরণের সিনথেটিক ড্রাগ। এটার উপাদানগুলো এমন, ঘরে বসেই তৈরি করা যায়। খরচ হেরোইনের চেয়ে অনেক কম, কিন্তু ভয়াবহতা অনেক অনেক বেশি।  এর কারণে আপনার স্মৃতিভ্রংশ রোগ হবে, সহজেই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হবেন, আক্রান্ত হবেন মেনিনজাইটিসে, আলসার, লিভার ড্যামেজ, কিডনি ড্যামেজ তো হবেই! তবে সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হলো আপনার মাংস খসে পড়বে। জ্বী, একদম বাড়িয়ে বলা হচ্ছে না। আসলেই আপনার শরীরের মাংস, চামড়া হারাবেন। শরীরের রক্ত বহনকারী শিরা এবং ধমনী ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এমন কী ফেটেও যেতে পারে, দাঁত পড়ে যাবে। গ্যাংগ্রিন হবে, মাংস পচে যাবে।  ক্ষয়ে যাবে টিস্যু। ফলে আপনার মাংস হয়ে যাবে কুমিরের পিঠের মত খসখসে আর সবুজ। পরিণতিতে মাংস ক্ষয়ে গিয়ে হাড্ডি বেরিয়ে পড়বে। কেন এই ড্রাগকে ক্রোকোডাইল নামে ডাকা হয় তা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন এখন? 
এবার দেখুন কিছু ভয়াবহ ছবি। (দুর্বলচিত্তরা দেখবেন না) 

ক্রোকোডাইল ড্রাগ এডিক্টের পা 
মাংস উঠে গেছে 
দাঁত ক্ষয়ে গেছে 
হাত বলে কিছু আছে আদৌ? 
শুধুমাত্র দৃশ্যমান ক্ষতির কথা বলে এর ভয়াবহতা বর্ণনা করা যাবে না। এটা ব্রেইনকে আক্ষরিক অর্থেই খেয়ে ফেলে, এবং নতুনভাবে মগজের কোষ তৈরি হয় না। ফলে আক্রান্তের আচার আচরণ হয় জোম্বির মত। ক্রোকোডাইলকে তাই অনেকে জোম্বি ড্রাগও বলে।
এত ভয়াবহতা স্বত্তেও কেন ক্রোকোডাইলে আসক্ত হচ্ছে রাশিয়ার বিপুল সংখ্যক মানুষ?
কারণ হচ্ছে, এটা নেয়ার খুব কম সময়ের মধ্যেই প্রতিক্রিয়া হয়। আট থেকে দশ মিনিট। কিন্তু থাকে খুবই অল্প সময়। মাত্র দুই ঘন্টার মত। এটা মরফিনের চেয়ে আট থেকে দশগুণ তীব্র। ব্যথা নাশক ক্ষমতাও তিন গুণ। খুব অল্প সময় ক্রিয়াশীল থাকে, বানানো সহজ, এবং দাম কম বলে মানুষ এটা বেশি বেশি নেয়। ধীরে ধীরে ডোজ বাড়তে থাকে। তারপর আর ফেরার উপায় থাকে না। বাঁচার উপায় থাকে না। প্রকৃতপক্ষে ক্রোকোডাইলের এমন ক্ষমতা, যা মানবদেহের প্রতিটি অঙ্গকে বিকল করে দিতে পারে। তার হাত থেকে নিস্তার নেই কোনোটিরই।
রাশিয়ায় হেরোইনের মহামারী শুরু হয় মূলত সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙ্গার পরে। মানুষজন হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে, তারা ড্রাগস এবং এ্যালকোহলে নিরাময় খোঁজে। হেরোইনের মূল উৎপাদন ক্ষেত্র আফগানিস্তানে একবার ফাঙ্গাসজনিত রোগে অপিয়ামের প্রোডাকশন ৪৮% কমে যায়। মূলত সেই সময়েই ক্রোকোডাইলের বিস্তার ঘটে। রাশিয়ায় ক্রোকোডাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় দশ মিলিয়ন বা এক কোটি।
রাশিয়া থেকে এক ড্রাগ আমেরিকাতেও ছড়িয়ে পড়েছে। মানুষের এই ভয়াবহ ধ্বংসকামীতার আসলেই কোনো ব্যাখ্যা হয় না। 
সূত্র- টাইম ডট কম 
প্রথম প্রকাশ এগিয়ে চলো ডট কম

Comments

Popular posts from this blog

প্যাথেটিক হোমিওপ্যাথি, কেন বিশ্বাস রাখছেন!

ইলুমিনাতি, একটি মার্কেটিং টুল; অথবা ছহি ইলুমিনাতি শিক্ষা

জ্বী না, সিয়েরালিওনের দ্বিতীয় ভাষা বাংলা নয়!