শ্যাওলাবাগান

পুনরাবৃত্তিক ক্রনিক একঘেয়েমীর কবলে পড়ে জীবনটা পানসে এবং আঁশটে হয়ে যাচ্ছে। কেউ হয়তো খুঁজে দেখলে জামার হাতার নীচে কিছু অদৃশ্য আঁশ পেলেও পেতে পারেন। জল নেই, আঁশ আছে, ব্যাপারটা কীরকম অস্বস্তিকর না! তাই সাঁতরানোর বৃথা চেষ্টা করে বেশ ধকল পোহাতে হয়। স্থলজ প্রাণীদের আঁশের বদলে পাখা থাকলে বরং ভালো হত। কিন্তু এই ক্লান্তিকর দিনগুলো এমনই স্যাঁতস্যাঁতে একটা আস্তরণ তৈরি করে মনে, যা যেকোন রকম ইতিবাচক শারীরিক অভিযোজনকে প্রতিহত করে।
আজ দুপুরের হিংসাত্মক ঘটনাগুলো ঘটার আগে আমার মানসিক অবস্থা এমনই ছিলো। শুধুমাত্র কাজের একঘেয়েমী, গতানুগতিক দৈনন্দিন এবং যথার্থ বিনোদনের অভাবকে এজন্যে পুরোটা দায় অবশ্য দেয়া যায় না। বিশেষ করে আজ, যখন বাসে করে অফিসে যাবার সময় আমার ব্যাগ চুইয়ে জল পড়ছিলো। পানির বোতলের ছিপিটা ঠিকমত না লাগানোতে এই অবস্থা। বাসের ভীড়ে অনেক কায়দা কানুন করে কোনক্রমে ছিপিটা যাও বা লাগানো গেল, তাতে জলক্ষরণ বন্ধ করা গেলো না। আক্ষরিক অর্থেই আমার শরীরটা এবার স্যাঁতস্যাতে হয়ে গেলো। আমি ঠিক জানি, একদিন না একদিন আঁশ না গজালেও শ্যাওলা জমে যাবে সেখানে। শ্যাওলামানবেরা অবশ্য খুব একটু দ্রষ্টব্য বস্তু না। আমার আশে পাশে অনেককেই তো দেখি, শ্যাওলা জমে দুর্গন্ধময়, পিচ্ছিল।
অফিসে এসে দেখি লোডশেডিং। বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে জেনারেটরটাও কাজ করছে না। ঘাম, পানি এবং অন্যান্য অনাকাঙ্খিত তরল (যদি থেকে থাকে), শুকোবার সুবন্দোবস্ত হত ফ্যানটা ছেড়ে চেয়ারে গা এলিয়ে বসে থাকলে। ব্যাগটা থেকে তখনও টিপটিপ করে পানি পড়ছে। এক লিটারের পানির বোতলের অর্ধেকটাই বোধ হয় ব্যাগের পেটে গেছে। কিছু তার হজম ক্রীয়ায় ব্যবহৃত হবার পর বাকিটুকু বর্জ্য হিসেবে অপসারিত হচ্ছে। জড় পদার্থের বর্জ্যই ভালো! মানুষের মত দুর্গন্ধময় না! তবে কী কেবল জড়রা সমবেত হলেই পৃথিবী সুগন্ধময় হতে পারে, নাকি দুই দলের সহাবস্থান প্রয়োজন? বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে এমন উচ্চমাত্রার দার্শনিকতা পেয়ে বসেছিলো আমাকে। সেই সাথে কাজ ব্যাহত হওয়ায় আগামীদিনের অতিরিক্ত চাপের কথা ভেবে বিরক্তও হচ্ছিলাম খুব।
ঠিক সেই সময়েই উত্তেজনাপূর্ণ ঘটনাপ্রবাহের শুরু। বিকট চিৎকার এবং অশ্রাব্য গালিগালাজের শব্দ শুনে কৌতুহল ভরে দৌড়ে গেলাম ঘটনাস্থলের দিকে। থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট এবং কালো গেঞ্জি পরিহিত একটা ছেলে, বয়স কত হবে, বিশ বা বাইশ; কীভাবে যেন অফিসে ঢুকে পড়ে চিৎকার করছে উন্মাদের মত। কিছু নমুনা না দিলেই না; যেহেতু উচ্চমাত্রার শব্দ এবং খিস্তি প্রয়োগ করতে আমিও ভালোবাসি, কিন্তু সুযোগের অভাবে দেয়া যায় না অনেকসময়। সে কোন একজনকে রুপোপোজীবিনিনন্দন, বরাহশাবক...যাহ দেখলেন আবারও সুশীলতা আঁকড়ে ধরছে, কাটিয়ে ওঠার জন্যে একটু সময় দিন...
১/খানকির পোলা
২/ শুয়োরের বাচ্চা
৩/হাউয়ার পোলা
৪/ সাথে কিছু চ বর্গীয় ক্রীয়াপদ
এসব আপত্তিকর সম্বোধনে সে একজনকে ডাকছিলো, এবং তাকে আহবান করছিলো যেন সে যেখানে লুকিয়ে আছে, সেখান থেকে নেমে এসে তার হাতের রডটি দ্বারা প্রহৃত হবার সুযোগ করে দেয়।
এতক্ষণে আমি পরিস্থিতির প্রকৃত হিংসাত্মক এবং সহিংস রূপটি উপলদ্ধি করতে পারি। ছেলেটির হাতে বেশ বড়সড় একটা রড, যার মাথায় আবার একটা হাতুড়ি জোড়া লাগানো। কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তিই এ ধরণের বস্তুর মুখোমুখি হতে চাইবে না, তা সে যত বড় অপরাধই করুক, যতই তার জন্যে অনুশোচনায় ভুগুক না কেন! ছেলেটির চিৎকার বেড়ে চলে এবং তার কাঙ্খিত ব্যক্তিকে এখানে না পাওয়ায় সে আমাদেরকে দোষারোপ করা শুরু করে। তার অসংলগ্ন কথাবার্তা এবং হিংস্র মনোভাবে আমরা এ ব্যাপারে নিশ্চিত হই যে সে নেশাগ্রস্থ অথবা মানসিকভাবে অপ্রকৃতিস্থ ছিলো। একবার আমার মনে হল যে, দেবো নাকি বেয়াদবটাকে দু-ঘা লাগিয়ে? এই বয়সে নেশা ধরেছে, আবার আমাদের অফিসে এসে মাস্তানি দেখাচ্ছে, মগের মুল্লুক নাকি! সেই সময় তিনটে ঘটনা ঘটে, বৈদ্যুতিক গোলযোগের অবসান হয়, ছেলেটি রডটা বাগিয়ে ধরে তেড়ে যায় সামনের দিকে এবং আমি আমার রুমের দিকে দৌড়ে যাই। দরজা লক করে দিয়ে চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে বসে থাকি। ফ্যান চলছে। খুব আরামদায়ক পরিবেশ। গায়ের ঘাম শুকোচ্ছে, বোতল লিক করে জলার্দ্র হওয়া ব্যাগটাও শুকোচ্ছে। আমার মনে আবারও দার্শনিক চিন্তাভাবনার উদ্ভব হয়। আজ এই উত্তেজনাকর উত্তপ্ত পরিস্থিতিটার খুব দরকার ছিলো।

বাণী এবং উপসিদ্ধান্তসমূহ
১/একটি উত্তপ্ত মনের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ অজস্র আর্দ্র মনকে শুকোতে পারে যা একশটি সূর্যও পারে না।
২/ মনুষ্য শরীর এবং মনে শ্যাওলা এবং আঁশের চাষাবাদ প্রতিহত করতে নিয়মিত বিরতিতে এমন ঘটনা ঘটা উচিত, যা আমাদের শঙ্কিত করবে, ভীত করবে, উত্তেজিত করবে এবং শেষ পর্যন্ত সবকিছু ভালোয় ভালোয় শেষ হবার পর আগত একঘেয়েমী দিনগুলো সহনীয় করে তোলার রসদ হিসেবে কাজ করবে।
এখন ঠিক তাই হচ্ছে কী না জানি না। ছেলেটির উন্মত্ত চিৎকার বেড়ে চলেছে। কাঁচ ভাঙার শব্দ শোনা যাচ্ছে। এসব কিছুই মন্দ না! বরঙ সত্যি বলতে কী, আমার জন্যে মাসল রিলাক্স্যান্ট হিসেবে কাজ করছে। সকাল থেকে কেমন যেন চুয়ো ঢেকুর উঠছিলো, তাও বন্ধ হয়ে গেছে।
-খানকির পোলা বাইর হয়া আয়। কই হান্দাইছোস?
আহা! শিথিলায়ন।
ঝন ঝন ঝনাৎ শব্দে কাঁচ ভাঙছে। খারাপ লাগছে না শুনতে। আসলে মানুষের শ্রবণ অনুভব সময় বিশেষে পরিবর্তিত হয়। এই একই শব্দ যদি বাসায় গিয়ে শুনি, তো মেজাজটা যাবে বিগড়ে, আরো শ্যাওলা জমবে আঁশটে কানতলাতে। তো দ্বিতীয় অনুসিদ্ধান্ত অনুযায়ী এতসব ভাঙচুর এবং স্ল্যাংবর্ষণের পরেও যদি তেমন কোন ফ্যাটাল ইনজুরি কারো না হয়, এবং ছেলেটি নিবৃত্ত হয়ে চলে যায়, তাহলে আমরা সকলে মিলে ব্যাপারটা নিয়ে বেশ জমজমাট একটা আলোচনাসভার আয়োজন করতে পারি। ঘুলঘুলি দিয়ে অনেকদিন পর তাজা এবং ঝড়ো বাতাস ঢুকলো আজ, আমরা তা ফিরিয়ে দিতে পারি স্বস্তিকর প্রশ্বাসের মাধ্যমে। এই কৌশলী বাতাস বিনিময় আমাদের আরো প্রাণবন্ত করবে নিশ্চয়ই! তবে তার আগে দেখতে হবে কেউ গুরুতর আহত হয়েছে কী না। দেখা গেলো বাড়ি মেরে ঘিলু বের করে দিয়েছে কারো, বা ঠ্যাং ভেঙে পঙ্গু করে দিয়েছে, তাহলে আর এই মৃদুমন্দ ভায়োলেন্সের দুলুনিতে আরাম পেয়ে বুঁজে আসা চোখ তন্দ্রাবিলাসের অবকাশ পাবে না।
চিৎকার এবং ভাংচুর বন্ধ এখন। চলে গেছে নাকি? আমি মনে মনে তার পরিমিতিবোধের প্রশংসা করে সন্তর্পণে, অতি সাবধানে দরজাটা খুলি। মাথাটা গলিয়ে দিয়ে বাকি দেহটা কক্ষের নিরাপদ আশ্রয়ে রেখে সতর্ক চোখে পর্যবেক্ষণ করি। নাহ। নেই। এবার পুরো শরীরটা বের করে ব্যাপক হম্বিতম্বি করলে সেটা নিঃসন্দেহে পরিস্থিতির চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে।
একটু পরে আমি আরেকটি অনুসিদ্ধান্ত নিই মনে মনে,
"আমাদের সক্ষমতা সরকারী ক্ষমতার ব্যস্তানুপাতিক এবং তা যেকোন সরকারের সময়কালের সাপেক্ষে ধ্রুবক হিসেবে পরিগণিত হবে"।
কেন আমাকে এই অনুসিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিলো তা বোঝাতে গেলে অধঃস্তন কর্মচারীদের, যারা এই এলাকা এবং মানুষজন সম্পর্কে সম্যক অবগত তাদের সাথে আমাদের আলাপচারিতার দ্বারস্থ হতে হবে।
-কী হয়েছিলো রে সোহেল? ঐটা কে?
-আরে স্যার, হ্যায় তো এই এলাকার জমিদার! পাশের বিল্ডিংটায় থাকে। হ্যার বাপে কিছু করে না, তয় চাচা লীগ করে। লীগের বড় নেতা।
-ওহ তাই নাকি! লীগের কানেকশন আছে বলে যা খুশি করে বেড়াবে? কী ভেবেছে সে! আর এখানে এসেছিলোই বা কেন? কাকে খুঁজছিলো?
-কার লগে যানি গ্যাঞ্জাম হৈসিলো, তারে দৌড়ানি দিসে, সে আবার নাকি এই বিল্ডিংয়ে আয়া ঢুকসে। হের লিগা খেপসিলো।
-পরে কী সেই ছেলেটাকে পাওয়া গেল?
-না, পায় নাই। অন্য কুথাও যায়া পলাইসে।
এরপরে আমরা প্রসন্নচিত্তে ভাঙা কাঁচ, চেয়ার এবং অন্যান্য সামগ্রীর হিসেব-নিকেশ করতে শুরু করি এবং আমাদের মধ্যে কেউ গুরুতর আহত হয়নি বলে সন্তুষ্ট হই। দুয়েকজনের একটু কেটে ছিলে গেছে, তাদের আমরা ঈর্ষা করি।
এমন বিনে পয়সায় শ্যাওলা অথবা আঁশ কামানোর সুযোগ কি সচরাচর আসে!
-ধানমন্ডি থানায় কেউ একজন ফোন করেন তো। একটা জিডি করে রাখা দরকার। এমন অনাচার মেনে নেয়া যায় না।
ব্যবস্থাপক সাহেব বলেন। আমরা সায় জানাই, এবং রিসিপশনিস্ট মেয়েটাকে আদেশ দিই অনুরুপ কর্তব্য পালনে।
মেয়েটির প্রসঙ্গ এলে পরে ঘটনাটিকে আরেকটু উইশফুলি ওয়েল শেপড করার ইচ্ছে জাগে আমার মনে। বেশ সুন্দরী মেয়েটা। অবিবাহিতা। চিৎকার চেচামেচিতে সবাই যখন বের হয়ে এসেছিলো, এক মুহূর্তের জন্যে তার ভীরু দু চোখে আমার চোখ পড়েছিলো। না হয় খেতাম দুটো রডের বাড়ি, তার চোখে তো হিরো হতে পারতাম! নাহ, বিরক্তি ঘোচানো ভায়োলেন্সের নাটিকায় উপাদান এমনিতেই অনেক বেশি হয়ে গেছে, রোমান্টিক বালখিল্যতার কোন দরকার নেই।
-ফোন করছেন না কেন আপনি? টেলিফোন ডিরেক্টরিটাতো সামনে রয়েছেই। ডু ইট কুইক!
বেশ জাঁকালো কন্ঠে বলি আমি।
-স্যার, সে যাওয়ার সময় হুমকি দিয়া গেছে যানি পুলিসরে খবর দেয়া না হয়, তাইলে নাকি খুব খারাপ হইবো।
শুকনো কন্ঠে পিওন ছেলেটা বলে।
-তা সে বললেই হবে নাকি? যাচ্ছেতাই করার কোন রাইট তার নাই।
আমি ততোধিক শুকনো কন্ঠে জবাব দিই।
এতক্ষণে এসির হাওয়ায় শরীর শুকিয়ে খটখটে। এরচেয়ে তো আমার শরীরের ক্রমবর্ধমান শ্যাওলাভ আঁশটে পিচ্ছিলতাই ভালো ছিলো!
"আমি একটু আসছি" বলে সোজা আমার রুমের দিকে গিয়ে দেখি ব্যাগটা এখনও ভিজে আছে কী না। বেরুবার সময় তো সব সুইচ অফ করেই বেরিয়েছিলাম। থলেতে থাকার কথা যথেষ্ট সিক্ততা।
হ্যাঁ! ওটা স্যাতস্যাতে এবং আর্দ্র। ব্যাগটাকে কিছুক্ষণ বুকে চেপে ধরে রাখি। খটখটে, রুক্ষ্ন, বেপরোয়া হয়ে কাজ নেই আমার।
শপথ
আমি শপথ করিতেছি যে, পিচ্ছিল পথে সাবধানে চলিব। মনে রাখিবো, নিশ্চয়ই প্রতিটি জীবিত প্রাণীকে ক্ষমতাধরদের তান্ডবের স্বাদ গ্রহণ অথবা অবলোকন করিতে হইবে। কদাচ একঘেয়েমীর অজুহাতে নিয়মিত বিরতিতে উত্তেজনাময় উন্মাদ আস্ফালন দেখিয়া নিরাপদ স্থানে বসিয়া শিথিলায়ন সুখ অনুভব করার কথা ভাবিবো না।
যা ভেবেছিলাম এক নেশাখোর পথভ্রষ্ট যুবকের আত্মশ্লাঘাময় অনর্থক কর্মকান্ড, তা বেশ জটিল আকার ধারণ করেছে এখন। পুলিসের জিজ্ঞাসাবাদে আমাদের অবস্থাটা খুব একটু সংহত মনে হচ্ছে না।
-তো আপনারা বলছেন সে কোন কারণ ছাড়াই হঠাৎ এসে আক্রমণ করল?
-সে কার খোঁজে এসেছিলো? সে আপনাদের কে হয়?
-আপনারা কতদিন যাবৎ এখানে অফিস স্থাপন করেছেন? এর আগে এরকম কিছু ঘটেনি, তো এখন কেন হচ্ছে?
-আপনাদের মূল ব্যবসাটা কী? কোন অসামাজিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত কী না, সরকারবিরোধী কিছু করছেন কী না এসব খতিয়ে দেখতে হবে।
বুঝতে বাকি রইলো না যে উপরিল্লিখিত অফিসার আসামীর কানেকশন সম্পর্কে ভালোভাবেই অবগত আছেন। আমরা কোনমতে জিডি রুজু করে তাকে বুঝিয়ে দিই যে এ শুধুই আনুষ্ঠানিকতা। আমাদের তরফ থেকে আর কোন ঝামেলা হবে না বুঝতে পেরে সে বিরসমুখে চলে যায়। কিন্তু জনাব, আপনাকে বুঝতে হবে,
"তোমাদের কাছে যা খেলা
আমাদের কাছে তা মৃত্যুসম"
অফিসে অন্যদিনের চেয়ে প্রাণচাঞ্চল্য বেশি হলেও কাজকর্ম একদম স্থবির হয়ে আছে হাল জামানার বীরপুরুষের বীর্যাত্মক আচরণে। জমে থাকা কাজগুলোর দিকে উদাস এবং নিরাসক্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আমি ভাবি,
"দ্যাট ওয়াজ টু মাচ!"
আমাদের নিস্তরঙ্গ জীবনে, শ্যাওলাবাগানে খুরপি চালাতে এসেছো, তা বেশ! সাথে তোমার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা, হুমকি-ধামকি, এসব নিয়ে আসার কী দরকার ছিলো! কিছুক্ষণ উল্লম্ফন, গালাগালি, ভাঙাভাঙি এসব করতে কেউ মানা করেছিলো? রড দিয়ে কয়েক ডজন লক্ষ্যভ্রষ্ট বাড়ি দিয়েছো, সেটাও যথেষ্ট তারঙ্গিক ছিলো। সুরটা খামোখাই কেটে দিলে! লহরীময় বায়ূ-পরিসঞ্চালন, বৈচিত্রহীন জীবনে মুর্ছনাময় সঙ্গত করা আর কিছু সময়ের জন্যে শিথিলায়ন, সব মুছে দিয়ে এখন আঁশটে শরীরে শ্যাওলা সাবান ঘষতে হবে!
আমি আর্দ্র হব। ভালোবাসবো স্যাতস্যাতে আবহাওয়া। আমার ভেতরে আঁশ এবং শ্যাওলার চাষাবাদ করে বিশেষ মানুষদের কর্ষনের জন্যে প্রস্তুত করে দেবো! উত্তপ্ত তেজোদ্দীপ্ত বস্তুর সংস্পর্শে আসবো না আর।
এসব প্রতিজ্ঞা করে অফিস থেকে বের হবার সময় দেখলাম, সেই ছেলেটি মোড়ের দোকানে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছে। তাকে দেখে আমার মধ্যে আবারও সেই বুনো কৌতুহল, বৈচিত্রের অন্বেষণ জেগে উঠলো। বেঁচে থাকার জন্যে একটু সাসপেন্স, একটু উত্তেজনা, একটু তীব্রতা, লড়াই, দ্বন্দ্ব, সংঘাত না থাকলে কী চলে!
"একটু একটু" বলেছি, বেশি না!
আমি ঠিক করলাম এগিয়ে গিয়ে তার সাথে আজকের ব্যাপারটা নিয়ে ধারালো খাপে মোড়ানো কিছু মুখোশ পরিহিত নরম কথা বলব। তাকে এখন ধাতস্থ দেখাচ্ছে, চোখে সেই উন্মত্মতা নেই। নেশা কেটে গেছে বোধ হয়! আর আমার জেগেছে।
কিন্তু আবারও বাধ সাধলো বোতল এবং ব্যাগটা। বোতলের ছিপিটা খুলে গেছে। ভিজে গেছে ব্যাগ। তা থেকে চুইয়ে চুইয়ে পানি পড়ছে...

Comments

Popular posts from this blog

প্যাথেটিক হোমিওপ্যাথি, কেন বিশ্বাস রাখছেন!

মৃতবৎসা জোছনার কাল

তোমার জন্যে শুভ্র গোলাপ, বেড়ালতমা -হামিম কামাল