(মুছে ফেলা অংশটুকু)
-জানেন আজকে আমার দুইটা দুর্ঘটনা ঘটেছে। প্রথমটা বাসে, অফিসে যাবার সময়। জানালার ওপর হাত রেখেছিলাম, হঠাৎ ড্রাইভার হার্ড ব্রেক কষলে পেছন থেকে জানালার শক্ত ঢাকনাটা জোরে এসে আঘাত করে। খুব ব্যথা পেয়েছিলাম। হাত চেপে রেখেছিলাম অনেকক্ষণ। অবশেষে মালিশ করে কিছুটা কমল।
এই ঘটনায় আমার প্রেমিকা মর্মাহত হয়েছিলো। কাছে থাকলে নিশ্চয়ই আদর করে দিতো!
দ্বিতীয় দূর্ঘটনাটা অফিস থেকে ফেরার পর। বাসার সামনে কিশোর বয়েসী কিছু ছেলে ক্রিকেট খেলছিলো। আমারও খুব খেলতে ইচ্ছা করল। খেলায় উত্তেজনা যখন তুঙ্গে, তখন একটা ঝুঁকিপূর্ণ রান নিতে গিয়ে পড়ে গিয়ে শক্ত রাস্তার সাথে ঘর্ষণে হাতের আঙ্গুল ছিলে কেটে একাকার অবস্থা! নিঃসন্দেহে এটা প্রথম ঘটনাটার চেয়ে বেশি মর্মান্তিক। আমি বাসায় ঢুকেই গর্বিত ভঙ্গীতে মাকে আমার কাটা হাত দেখালাম। ঐদিন এবং আরো কয়েকদিন ভাত মাখাতে পারিনি, মা মাখিয়ে দিতো। আমার সহকর্মী এবং বন্ধুদের সুযোগ পেলেই ক্ষতস্থানটা দেখাতাম। আর প্রেমিকার সামনে হাত বাড়িয়ে দিলে সে খুব মিষ্টি করে ওখানে চুমু খেত।
"একটু সাবধানে থাকতে পারোনা?" ও শাসনের সুরে বলেছিলো। তারপর আরেকদিনের ঘটনা বলি শোনেন, সেদিন আরো বড় এ্যাক্সিডেন্ট হয়েছিলো। হল কী..."
(মুছে ফেলা হয়েছে)
(৩)
-কেমন লাগে?
মানুষটির নখের ভেতর তীক্ষ্ণ একটা সূঁচ ঢুকাতে ঢুকাতে সে জিজ্ঞাসা করল। তীক্ষ্ণ এবং লম্বা সুঁচ। নখের ভেতর ধীরে ধীরে আয়েশ করে ঢুকোচ্ছে সে। কোন তাড়া নেই। সে তার কাজকে ভালোবাসে। দীর্ঘ সূঁচটা নখ থেকে শুরু করে বাহুর শিরা পর্যন্ত পৌঁছুবে বলে সে আশাবাদী। যত্নের সাথে কাজ করে চলেছে। মানুষটি তীব্র ব্যথায় চিৎকার করতে করতে যখন অজ্ঞান হয়ে যাবে, ঠিক তার আগের মুহুর্তে সে সূঁচটি বের করে নিয়ে তাকে হালকা ব্যথানাশক দেয়। আবার জিজ্ঞেস করে,
-কী, কেমন লাগে!
মানুষটির অবশ্য উত্তর দেয়ার কোন অবস্থা নেই। কারণ তার জিহবাটা খুব নিখুঁতভাবে কেঁচি দিয়ে কেটে দুইভাগ করা হয়েছে। দুপাশ ল্যাগব্যাগ করে ঝুলছে। সুন্দর লাগছে দেখতে।
নিজের কাজে সন্তুষ্ট হয়ে সে তার সহকর্মীর সাথে কথা বলতে যায় প্রসন্নচিত্তে।
"কিরে আজরাঈল তোর খবর কী?"
"বেশ ভালো। আজকে বেশ কয়েকটাকে ধরব"
"আমি একটু আগে একজনকে সেবা করে আসলাম। তবে ওর কাছে আজকে যেতে পারবিনা। আরো কয়েকদিন রাখবো ওকে আমি"
"আচ্ছা"
"একটা ব্যাপার ভেবে খারাপ লাগে জানিস, আমি এত কাজ করি, কিন্তু কেউ আমাকে চেনেইনা। অথচ তোকে সবাই একনামে চেনে"
"এরকম হয়। মন খারাপ করিসনা। যা কাজ কর। কাজ করলে মন ভালো থাকে"
সে বাধ্যগত বালকের মত কাজ করতে যায়। এবার একজনের নাভিটা সাঁড়াশী দিয়ে টেনে উঠিয়ে ফেলতে চায়। খুব ধীরে ধীরে। কোন তাড়াহুড়ো নেই।
" কী রে কেমন লাগে?" গৎবাঁধা প্রশ্নটা সে আবারও করে। এবং যথারীতি কোন সন্তোষজনক উত্তর পায়না। এই মানুষগুলো এত চিৎকার করতে পারে! গলা ফাঁটিয়ে চেচাচ্ছে। সদ্যপ্রসূত শিশুর মত। চিৎকার চেচামেচি শুনে আগ্রহী চোখ নিয়ে আজরাঈল ছুটে আসে। ধারালো নখগুলো দিয়ে মেয়েটার বুক ফেঁড়ে হৃৎপিন্ডটা বের করে আনে।
"পারফেক্ট!"
তার সহকর্মী তাকে উৎসাহ দেয়। তারা আবার গল্পে মজে ওঠে।
"তোর নাম লোকে জানেনা বলে তখন আক্ষেপ করছিলি, আমি ভাবলাম তোকে একটা সুন্দর নাম দিই"
"কী নাম, বল!" চোখ চকচক করে ওঠে তার।
"থার্ড ব্লো"
"হে হে! ইংরেজি। তা নামটা ভালোই দিয়েছিস। ব্যথার সর্বোচ্চ সীমা কতটুকু পর্যন্ত উঠানো নামানো যায় এটা আমার থেকে ভালো আর কে জানে! কিন্তু থার্ড শব্দটার মাহাত্ম্য কী?"
"আরে শুনিসনি, দান দান তিনদান! মনে কর কেউ একজন জীবনে দুইবার ভীষণ ব্যথা পেয়ে চিৎকার চেচামেচি করে যাচ্ছেতাই এক কান্ড করল। তারপরেও সে ঠিকই দাঁতব্যথা নিয়ে মুরগীর রোস্টে কামড় দেবে, হাতের ইনজুরি নিয়ে প্রেমিকার কাছ থেকে সহানুভুতি আদায় করে নেবে। কিন্তু তিনবারের বার আর পালাবে কোথায়! তোর খপ্পরে পড়লে বুঝবে ব্যথাশিল্পের কারুকাজ কেমন। অবশ্য সেটা যে তিনবারের বার হবে এমন কথা নেই..."
"কিন্তু শুনতে ভালো শোনায় তাইতো?" আজরাঈলের কাছ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বলে থার্ড ব্লো। ওদের দুজনের মধ্যে খুব ভালো সমঝোতা।
একজন ব্যথাশিল্পী
আরেকজন মৃত্যুশিল্পী
এই শিল্প নিয়ে মানুষজনের মধ্যে তরুণ বয়সে চর্চা এবং ব্যবহারিক প্রয়োগ দেখা গেলেও ধীরে ধীরে তা মিইয়ে আসে। আজরাঈল আর থার্ড ব্লো'র কাছে নিরাবেগ, বুদ্ধিমান মানুষেরা যেচে আসতে চায়না। তাদের এই অপূর্ণতা অবশ্য পূরণ হয়ে যায় অভিমানী কিশোরীর গলার ফাঁসে অথবা হতাশ প্রেমিকের বেদনার নীল বিষে।
"আচ্ছা একই কাজ দিনের পর দিন একভাবে করে যাস, তোর একঘেয়ে লাগেনা? আমি তো বোর হয়ে যাই মাঝেমধ্যে"
আজরাঈল সুধোয় থার্ড ব্লো কে। এ কথা শুনে তার ঠোঁটের কোনায় মুচকি হাসি খেলে যায়।
"তোর কাজটা আসলেই বোরিং। আসো ,নিয়ে যাও শেষ! আর আমারটা? কত যে বৈচিত্র তুই কল্পনাও করতে পারবিনা। কারো ঠোঁটে প্লায়ার্স দিয়ে চেপে ধরি, কারো ক্ষতবিক্ষত, রক্ত-পুঁজে জেরবার উরুতে খামচি দিই, কারো যৌনাঙ্গ বিদীর্ণ করে তপ্ত সীসা ঢেলে দেই। এতো গেলো বাইরের অঙ্গগুলোর কথা। ভেতরেরগুলো বললে তো শেষই হবেনা। তুই কী বুঝবি একটা নষ্ট, ছিদ্র ফুসফুস দিনের পর দিন কামড়ে ধরে থাকা অথবা কারো কেটে ফেলা স্তনে নতুন মারমুখী কোষ ছড়িয়ে দেয়ার মজা!"
"হু, তুই বেশ মজায় আছিস যা হোক!"
"ঠিকই বলেছিস"
একজনের চোখের মনিটাকে কাটাচামচ দিয়ে সযত্নে খোঁচাতে খোঁচাতে থার্ড ব্লো সহাস্যে উত্তর দেয়। তার হাসি আরো বিকশিত হয় স্ফীত উদরের এক রমণীকে দেখে। অন্তঃস্বত্তা। আজরাঈলও তাকে দেখে মনে মনে বলে
"পেয়ে গেছি!"
তারা দুইজন একসাথে মহিলাটির কাছে যায়। প্রথম পর্বটুকু সম্পন্ন করবে থার্ড ব্লো। ততক্ষণ আজরাঈলের অপেক্ষা। এই সময়টায় সে টুকটাক কথা বলে থার্ড ব্লো'র সাথে।
"কী করছিস?"
"খিক খিক! এর ভ্যাজাইনাতে আস্ত হাতটা ঢুকিয়ে দিয়ে নাড়াচাড়া করছি। দেখনা কত চিৎকার করছে!"
"তুই অতীব দক্ষ"
"ধন্যবাদ স্যার!"
"আচ্ছা আয় একটা ওয়াইল্ড গেজ করি। তোর কী মনে হয়, এটা কি এই মহিলার আক্ষরিক অর্থেই থার্ড ব্লো? থার্ড ব্লো মানে কিন্তু তৃতীয়বার প্রেগন্যান্ট হওয়া বুঝাচ্ছিনা। এটা তার প্রথমবার হতে পারে, কিন্তু এটাই কি তোর মাইটি থার্ড ব্লো?"
"আরে এটা হচ্ছে এক্সট্রিমের মধ্যে এক্সট্রিম" হঠাৎ করে গলার স্বরটা পালটে রুক্ষ করে ফেলে সে।
"এক্সট্রিমের মধ্যে এক্সট্রিম হলে তোর তো মজা পাওয়ার কথা, বিরক্ত হচ্ছিস কেন?"
"আর বলিসনা। এই একটা ক্ষেত্রেই আমি ব্যর্থ হই বারবার।" চোখমুখ শক্ত করে বলে সে। "এত ব্যথা দেই, এত প্রেসার দেই, কিন্তু কোনভাবেই হতচ্ছারীদের চোখের লুকানো ঔজ্জল্য কমতে দেখিনা"
ওদের কথোপকথনের মধ্যে কেউ কখনও অনধিকার প্রবেশ করেনা। করবে কিভাবে, চিৎকার আর ভয়েই যে যায় বেলা! কিন্তু এইবেলা নারীটি অথবা অজস্র নারীর সম্মিলিত স্বর খুব ক্লান্ত কন্ঠে বলল,
"তোমাদের 'তৃতীয় চরম আঘাত তত্ত্ব' আমি জানি। থার্ড ব্লো, তুমি যতই ব্যথার নিষ্ঠুর জাদুকর হওনা কেন, এক্ষেত্রে তোমাকে পরাজিত হতেই হবে। ব্যথার চারিদিকে যে অনাগত আনন্দবলয় ঘিরে থাকে তা কী তুমি দেখতে পাও! আর দেখতে পেলেই বা কী, বুঝতে পারো? কক্ষণও না। আজরাঈল, তুমি নিজেকে মৃত্যুশিল্পী বল, তাইতো? আমি নিজেকে শিল্পী না, শ্রমিক হিসেবে দাবী করব। তোমরা যতই ধনী, অভিজাত, আর শক্তিশালী হওনা কেন, আমাদের জীবনচক্রকে ধ্বংস করতে, আর ভালোবাসার গুপ্তধনকে কুক্ষিগত করতে চাইলেই পারবে ভেবেছো? কখনও না!"
আজরাঈল গোমড়া মুখে মহিলাটির হৃৎপিন্ড টান দিয়ে ছিড়ে ফেললো। থার্ড ব্লো'র মনটাও খারাপ, কাজ করে তৃপ্তি পায়নি দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
"আরে বাদ দে, মাঝেমধ্যে এরকম হতেই পারে, তাতে হতোদ্যম হলে কী চলে? চল চল অনেক কাজ বাকি"
"হু, চল" বিমর্ষ কন্ঠে জবাব দেয় সে। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার তার মধ্যে উদ্দীপনা ফিরে আসে। তার চোখ ঝিকমিক করে ওঠে একজন রক্তাক্ত যুবককে দেখে।
"আমার অভিজ্ঞ চোখ বলছে একে আমি পারফেক্ট থার্ড ব্লো দিতে যাচ্ছি। এ একেবারেই ফ্রেশ। দারুণ!"
আজরাঈল আর থার্ড ব্লো'র ছুরির ফলার মত চকচকে আর নিষ্ঠুর চোখ দেখে যুবকটিও 'তৃতীয় চরম আঘাত' তত্ত্বটি অনুধাবন করতে পারে। ধ্রুব সত্য আর মনোবিকারগ্রস্থ সাইকো বাস্তবের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সে অক্লেশে মুছে দিতে পারে ফার্স্ট ব্লো আর সেকেন্ড ব্লো'র আদুরে দাগ...
(২)
(মুছে ফেলা হয়েছে)
(১)
(মুছে ফেলা হয়েছে)

Comments

Popular posts from this blog

প্যাথেটিক হোমিওপ্যাথি, কেন বিশ্বাস রাখছেন!

মৃতবৎসা জোছনার কাল

তোমার জন্যে শুভ্র গোলাপ, বেড়ালতমা -হামিম কামাল