হারুনের ইচ্ছেদুপুর

দুপুরবেলায় জম্পেশ একটা ভোজের পরে ঘুমের আবেশে চোখ বুঁজে এলে জীবন সম্পর্কে নেতিবাচক চিন্তাগুলো কিছুক্ষণের জন্যে হলেও স্থগিত রাখতে পারে হারুন। কড়া ঝাল আর মশলা দিয়ে তৈরি মাংসের তরকারির গন্ধযুক্ত ঝাঁঝালো একটা ঢেকুর তুলে বিছানায় যাবার সময় সন্ধ্যা পর্যন্ত টানা একটা ঘুম দেবার সিদ্ধান্তটা চুড়ান্ত করে ফেলে। জগতের আনন্দধারায় হারুনের দিবানিদ্রা সংযুক্ত হতে গিয়ে বাধা পায় যন্ত্রের শব্দে। পাশেই একটা নতুন দালান উঠছে। ইট-সুড়কি প্রক্রিয়াকরণের কাজে দিনের অধিকাংশ সময় ব্যস্ত থেকে তা এলাকার মানুষের কর্ণগহবরে ডাকাবুকো মাস্তানের মত ঠেলেঠুলে ঢুকে পড়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে। দিনের এই সময়টায় সচরাচর হারুনকে বাইরে থাকতে হয় বলে সে এই বিপত্তির কথা জানতো না। "হালার এমুন শব্দের মধ্যে ঘুমামু কেমনে!" রোষ প্রকাশ করে সে। সাথে কিছু খিস্তিও ছুড়ে দেয় যন্ত্র এবং তার নিয়ন্ত্রণকারীদের। একটু আগের সুখানুভূতি উবে যাওয়ায় সে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তার ইচ্ছে করে ওখানে গিয়ে খুব করে দু কথা শুনিয়ে দেবে তাদের। তবে তার আর দরকার পড়েনা। হঠাৎ করেই শব্দটা থেমে যাওয়ায় হারুন দারুণ উৎফুল্ল হয়। তার মধ্যে আবারও নবাবী ভাবটা ফিরে আসে। তেজোদ্দীপ্ত ভাবনার উনুনে আগুনটা চাগিয়ে দিয়ে সে এও ভাবে যে কিছুক্ষণ আগে যন্ত্রটার প্রতি তার অশুভ ইচ্ছা এবং রাগ প্রকাশের কারণেই তা বন্ধ বা বিকল হয়ে গেছে। কাকতালীয় অথবা অতিপ্রাকৃত যেভাবেই ভাবা হোক না কেন, ঘটনাটা তাই ঘটেছিলো। নির্মিতব্য বাড়ির মালিকের সাথে মেশিন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের মালিকের বাদানুবাদে তা স্পষ্টভাবেই প্রতীয়মান হয়।
-কী মিয়া, মেশিন থাইমা গেল কেন? আপনারে না কইসিলাম আইজকার মধ্যেই কাজ কমপ্লিট করতে হইব? এহন পোতায়া গেল কেন? ফাইজলামি পাইসেন?
বাড়ির মালিকের রোষের মুখাপেক্ষী হয়ে যন্ত্রকারিগর অপ্রতিভ হবে কী, পাল্টা বচসা শুরু করে।
-মেশিন কি আমি নিজ ইচ্ছায় থামাইসি নাকি? আমার নিয়্যত ঠিকই ছিলো। আজাইরা ব্লেম করবেন না। কিছু একটা হয়তো সমস্যা হইসে, দ্রুতই ঠিক কইরা লমু। এত পেরেশান হইলে তো হবে না!
-পেরেশান হমু না তো কী! দুইদিন পরপর ঝামেলা করেন, আবার বড় বড় কথা কন। আধাঘন্টার মধ্যে স্টার্ট না করতে পারলে আপনার মজুরী কাটা।
মজুরী কাটার হুমকি শুনে যন্ত্রকারিগর ক্ষেপে যায় রীতিমত। ইট, সুড়কির প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যাপারে হারুনের আদৌ কোন আগ্রহ ছিলোনা। সে শুধু চেয়েছিলো ছুটির দিনটাতে একটা নিরুপদ্রব ঘুম। যন্ত্রের বিকট শব্দ আর এর বিকলতাজনিত বচসায় তার ভাতঘুম মাটি হওয়াটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সুরাহা হওয়াই তার প্রত্যাশিত ছিলো।
এই ঘটনা, এই বচসা, এই বাদানুবাদ হারুনকে বিরক্ত করে তোলে। এমন দিন আর কটা আসবে? দুপুরবেলায় সুন্দর আবহাওয়ায় ভরপেট ভোজন, চোখের মধ্যে মৃদুভাবে জ্বলতে থাকা ঘুমবাতির মৃদু নীল আলোর সেই সুন্দর পরিবেশ আর কী ফিরে আসবে!কঠোর পরিশ্রমের মাঝখানে একটি ভোজনবিলাস পরবর্তী আরামদায়ক ঘুম এভাবে নস্যাৎ হওয়াতে সে বেশ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। ইচ্ছে করে ঘটনাস্থলে গিয়ে দু পক্ষকে খুব একচোট হম্বিতম্বি করে আসে। তবে সাহসে কুলোয়না। ছাপোষা একজন কর্মচারী সে। তার ইচ্ছের বুদবুদ রাগী দুই মানুষের কাছে গেলে হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে, এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই! তবে মাঝেমধ্যে ইচ্ছেদেবতা কাউকে বিস্ময়কর কোন উপহার দিয়ে থাকে! দু পক্ষের বাদানুবাদ কমে আসে। মেশিনটা চালু হবার আর কোন সম্ভাবনা নেই, এটা মেনে নিয়েই তারা আজকের মত ক্ষান্ত দিয়ে পরের দিনের জন্যে পরিকল্পনা আঁটে। কোলাহল কমে এলে হারুনের চোখের পাতা ভারী হয়ে আসে আবার। ঐদিন সন্ধ্যানাগাদ তার খুব ভালো ঘুম হয়।
সপ্তাহখানেক পরে আবারও বাসায় অবকাশযাপনের সুযোগ পায় হারুন। নতুন চাকুরিটাতে খুব খাটনি যাচ্ছে। ছুটিছাটা বলতে গেলে পাওয়াই যায় না। দিনের পর দিন অবিশ্রান্ত কাজ। পরপর দু সপ্তাহ ছুটি পেয়ে হারুন উল্লসিত হয়। সেদিনের জন্যে সে চমৎকার একটা বিলাস পরিকল্পনা করে ফেলে। সে অনেক বেলা পর্যন্ত ঘুমোয়,জমানো টাকা থেকে দিলখোলা ব্যয়ের প্রস্তুতি নিয়ে অনায়াসে পোলাওয়ের চাল দিয়ে তৈরি খিচুড়ি এবং গরুর মাংসের আয়োজন করে। খেয়ে দেয়ে আধা লিটার কোকের বোতল পুরোটাই শেষ করে তৃপ্তির ঢেকুর তোলে। তবে আজ আর ঘুম আসছেনা তার। তো কী করা যায় এই ছুটির দিনে? বাইরে কোথাও ঘুরতে যাবে? নাহ, খামোখা পয়সা খরচ। গল্পের বই-টই থাকলে পড়া যেত, কিন্তু এসবে তার আগ্রহ কোনকালেই ছিলো না। তারপরেও, সময় কাটানোর জন্যে পাশের রুমের কলেজপড়ুয়া সিদ্দিকের কাছ থেকে একটা বই ধার নেবে ঠিক করে। সিদ্দিক ছেলেটার শখের কমতি নেই। সাম্প্রতিক বহুলবিক্রীত রোমান্টিক বই থেকে নতুন সেলফোন, ইউরোপিয়ান জনপ্রিয় লীগের জায়ান্ট টিমের জার্সি সবতেই সে হালনাগাদ থাকে। নতুন দামী সেলফোনের পরিচালন প্রক্রিয়া বা ইউরোপিয়ান লীগের শীর্ষে থাকা দল নিয়ে হারুনের কোন আগ্রহ নেই। সময় কাটানোর জন্যে একটা কিছু রোমান্টিক, বেশি ইরোটিক বই পড়ার আগ্রহ তার মধ্যে জেঁকে বসে।
-কী টাইপ বই পড়তে চান? রোমান্টিক, এ্যাকশন নাকি গোয়েন্দা?
-রুমান্টিকই দ্যাও।
উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবারের কারনেই কী না, শরীরের মধ্যে একটা কাম-উত্তাপ অনুভব করে সে। রোমান্টিক বই বেছে নেয়ার কারণ হিসেবে নায়ক নায়িকার যৌনজীবনের বর্ণনা থাকবে এমন কিছুই আশা করছিলো সে। কিন্তু ছোটভাইয়ের বয়সী কক্ষ প্রতিবেশীকে তো আর তা বলা যায় না! সে অনেক ভেবে একটা যুৎসই বাক্য তৈরি করে, যা তার মতে ছোটভাইয়ের কাছে এই অলস শয়তান দুপুরে ভব্যতা বজায় রেখেও তার উদ্দেশ্যসিদ্ধির ব্যাপারে ফলপ্রসু হতে পারে। "একটু সেইরম সিন বেশি আছে এই টাইপের দিবা বুঝছো?" প্রথমে এই বাক্যটি তার মাথায় এলেও পরবর্তীতে সে আরেকটু নিকষিত করে একটি ইঙ্গিতপূর্ণ আহবান করে, "একটু বেশি রুমান্টিক দেইখা দিও" সে আশা করে লাফাঙ্গা ছেলেটিকে তার উদ্দেশ্য বর্ণনের জন্যে এটাই যথেষ্ট! সিদ্দিক হয়তোবা বুঝতে পারে। সে মুচকি হেসে একটা রগরগে বর্ণনা সমৃদ্ধ "রোমান্টিক" বই বেছে দেয়।
বেশ উত্তেজক একটা বই। পড়তে পড়তে বারবার হারুনের লিঙ্গ উত্থিত হয়। দুপুরবেলার অলস সময়টা শয়তানের প্ররোচণাকার্য চালানোর জন্যে অতি উত্তম। হারুনের ইচ্ছে করে বইয়ে বর্ণিত দৃশ্যগুলো বাস্তবে দেখতে। নায়িকা সাবরিনার সাথে অভিসারে নায়ক আকাশ ধীরে ধীরে তার স্বচ্ছ রাত্রিপোষাক খুলতে থাকে... এই সময়টায় হঠাৎ করে পরবর্তী অধ্যায়ের সূচনা হওয়ায়, যেখানে সাবরিনার চিন্তাক্লিষ্ট বাবা-মা তার ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করছেন, হারুন ক্ষেপে ওঠে। "বালের বই লিখছে হালায়! বালের লেখক হইছে!"। বইটা ছুড়ে ফেলে দিয়ে জানালার কাছে থুথু ফেলতে গিয়ে দাঁড়ালে সে এক অভাবনীয় দৃশ্য দেখতে পায়। নির্মানাধীন ভবনটার এক কোণে অল্পবয়সী দুটো ছেলেমেয়ে খুব জড়াজড়ি জড়াজড়ি জড়াজড়ি করছে, চুমু খাচ্ছে। মেয়েটা সাবরিনার মত সুন্দর না, তাতে কী! ছেলেটা তার বুকের কাপড় খুলতে চায়...
এবং ছুটির দিনের দুপুরে আবারও হারুনের ইচ্ছাপূরণের ঘটনা ঘটে!
টানা ছয় মাস মার্কেটিং কোম্পানিতে গাধার খাটুনি খাটার পরে পদোন্নতি না হলেও হারুনের জন্যে নিয়মিত ছুটি বরাদ্দ করা হয়। শ্রম এবং ছোটাছুটিও অনেক কমে আসে। এক সপ্তাহ পর আরো একটি ছুটির দিনে বিলাসিতা করার ইচ্ছাটাকে সে মনমরা হয়ে চাপা দিয়ে রাখে। মাসের শেষ। কৃপনতাকাল চলছে এখন। না চালিয়ে উপায় নেই। পাশের হোটেল থেকে কাচ্চি আনিয়ে খেতে খুব ইচ্ছে করছে, কিন্তু ইচ্ছের ঘুড়ি অতদূর উড়তে না পেরে মেসের রান্নাঘরের কাঁচকি মাছের কাঁটার সাথে গোত্তা খেয়ে পড়ে যায়। আধাপেটা খেয়ে তিক্ত মুখে বিছানায় শুয়ে ইচ্ছেমত নিজের ভাগ্যকে গালাগালি করতে থাকে সে মনেমনে। তার ওপর আবার পেটটাও কেমন মুচড়ে উঠছে। কয়েকবার টয়লেটে যাওয়া আসা করে তার মোটামুটি কাহিল দশা! "ভালোই হইসে আইজকা কাচ্চি না খায়া। তাইলে অবস্থা আরো খারাপ হইতো।" সান্ত্বনা দেয় সে নিজেকে।
এমনসময় পাশের রুমের সিদ্দিক ছোকড়াটা আসে তার সাথে গল্পগুজব করতে।
-কী অবস্থা হারুন ভাই! যাইবেন না দাওয়াতে?
-কুন দাওয়াত?
-নতুন বাড়িটা উঠছে যে, মালিক খাওয়াইবো আমগোরে। হে দাওয়াত দিছে। মালদার পার্টি। প্যাকেট বিরানি দিবো নাকি শুনলাম।
-হ যামুতো! সামাজিকতা বজায় রাখাটা দরকার, বুঝলা?
বলতে বলতে তার পেটে আবার মোচড় দিয়ে ওঠে। কোনক্রমে কাপড় নষ্ট না করে প্যানের ওপর বসে বিসর্জনকালের সময় সে ভাবে দাওয়াতে গেলে পেটের অবস্থা আরো করুণতর হতে পারে। কিন্তু ভাবনাটাকে সে পাত্তা দেয় না। "স্লাইন আর ফিলমেট খায়া নিলেই হইবো, সিদ্দিকের কাছে আছে মনে হয়"। কেনই বা পাত্তা দেবে! পরপর তিন ছুটিতে তিন ইচ্ছা পূরণের ক্ষেত্রে কোন বাধা গ্রাহ্য করা ঠিক হবে না। শব্দ সৃষ্টিকারী মেশিনের দৌরাত্ম বন্ধ করা, যৌনাবেদনময়ী কিশোরীর স্তন দেখা, আর সুস্বাদু কাচ্চি বিরিয়ানির স্বাদ নেয়া, সে চাইলেই যখন হচ্ছে, ছুটির দিনগুলোতে আলাদীনের চেরাগ থেকে দৈত্য বের হয়ে তার পায়ের ওপর পড়ছে, ইচ্ছার বাদশা হবার এই সুযোগ, তা কাকতালীয় বা অলৌকিক যাই হোক না কেন, ছাড়ার সুযোগ করতে যাবে কোন বোকা! হারুন ছাপোষা হতে পারে, তবে বোকা নয় নিশ্চয়ই!
হারুনের ইচ্ছেখাতা বরাবরই নিয়তির পরীক্ষায় ডাব্বা মেরে এসেছে। কম্পিউটারে কিছুদিন মাইক্রোসফ্ট অফিস শিখতে গিয়ে নিজের দোকান দেবার ইচ্ছে ছিলো, হয়নি। এফডিসিতে "নতুন মুখের সন্ধানে" গিয়ে নর্তন-কুর্দন করে রূঢ়ভাবে প্রত্যখ্যাত হয়েছে। আর ফিরোজার পিছুপিছু ঘুরে শেষ গন্তব্যস্থল হিসেবে আবিস্কার করেছে জমকালো কমিউনিটি সেন্টার! শেষতক মার্কেটিংয়ের শ্রমসাধ্য কাজটি দিয়ে এসব ইচ্ছেচড় আড়াল করার বৃথা চেষ্টা করে চলেছে এতদিন। তবে গত কয়েকদিনের কার্যপরিক্রমায় সে আবার নতুন করে ইচ্ছেবইটা সম্পাদন করার সাহস পেয়েছে বটে! তার ইচ্ছাতে থেমে যায় যন্ত্রের কর্কশ শব্দ এবং ধুরন্ধর ব্যক্তিদের ঝগড়া! তার ইচ্ছেতে সফটপর্ন বইয়ের দৃশ্যগুলো বাস্তব এবং স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এখন তার ইচ্ছে করছে নতুন বাড়িঅলার দাওয়াতে কাচ্চি বিরানী সাঁটাতে। ইচ্ছেরা যখন দল বেঁধে আসছেই, পূরণ করার সুযোগটা ছাড়বে কেন সে!
টয়লেট থেকে বাদশাহী ভঙ্গিতে বের হয়ে হারুনে গলায় আদেশসুলভ ভারিক্কি এনে সিদ্দিককে দশটা টাকা দিয়ে সে নির্দেশ দেয়, "একটা স্যালাইন আর ফিলমেট নিয়া আসো, কুইক!"
আলাদীনের চেরাগের তিন ইচ্ছার রূপকথায় সে বিশ্বাস করে না, তবে কায়ক্লেশে কাটানো এ জীবনে তিনের অধিক ইচ্ছাপূরণের ব্যাপারে তার একটা অদ্ভুত আত্মবিশ্বাস জন্মে যায়। রূপকথাকে পাত্তা না দিয়ে এইসব দুপুর-বিকেলের অলৌকিকতা বা কাকতাল তার কাছে অধিকতর বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়।
-কী হইল সিদ্দিক, তোমারে কী কই কানে যায়না?
সিদ্দিক তখন তার নতুন বান্ধবীর সাথে ফোনসেক্সে মত্ত। শুনেও না শোনার ভান করে।
-বাইঞ্চোত একটা!
খিস্তি করে ওঠে হারুন। জোরে কথা বলায় তার আবার বেগ পেয়ে যায়। নাহ, সিদ্দিকের ওপর ভরসা করাটা ঠিক হবে না। ইচ্ছেদুপুরগুলোকে সার্থক করার অন্বেষায় হারুন নিজেই ফার্মেসিতে যায় প্রয়োজনীয় ঔষধ কিনতে। আগামীকাল ছুটি নেই। দৌড়াদৌড়ি করতে হবে অনেক। লাঞ্চে হয়তোবা জুটবে পাউরুটি আর কলা। ইচ্ছেদুপুরের অবাধ স্বাধীনতা এবং প্রাপ্যতা বিকিয়ে দেয়ার কোন মানে হয়না!
দাওয়াতে যেতে একটু দেরী হয়ে গেলে বিরানীর প্যাকেটের বন্টন নিয়ে কিছুটা অসাম্ভব্যতার সৃষ্টি হয়। এ ক্ষেত্রে ভব্যতার ধার না ধেরে হারুন অনেকটা জোর করেই পরিচিত একজনের মারফৎ একটি প্যাকেট কব্জা করে নেয়! পেটের মধ্যে এখনও অবশ্য খাদ্যতন্ত্রগুলো গুরুপাক খাবারের আগমনে অনীষ্ট হবে কী না তা নিয়ে ভীষণ তর্কে মশগুল। তবে অকস্মাৎ ইচ্ছেপূরণের জয়ী আনন্দে হারুণ শারীরিক অবস্থার কথা ভাবা আপাতত উহ্য রাখে। খাবার ইচ্ছের চেয়ে ইচ্ছেপূরণের আনন্দই তার কাছে প্রধান।
আলাদীনের চেরাগ ঘষে তিন ইচ্ছে পূরণের মত করে হারুন ধীরে ধীরে ঘষতে থাকে বিরিয়ানীর প্যাকেট আর ফিলমেট। ইচ্ছেপরিক্রমার মসৃন পথে জোরকদমে হেঁটে আগামী দশদিনের প্রবল পরিশ্রম এবং বকেয়া বিলের কথা কিছুক্ষণের জন্যে হলেও সে ভুলে থাকতে পারে!
হারুনের চোখে বর্ণালীর মত ঘুরতে থাকে ইচ্ছেদুপুরের আনন্দময় স্মৃতিগুলো! বিরিয়ানীর প্যাকেটের হাড্ডি-মাংস আর ডিমের মধ্যে সে ওই দুপুরের অনাবৃতা বালিকা আর বশংবদ ঢালাইযন্ত্রের ছায়া দেখে মিটিমিটি হাসে।

Comments

Popular posts from this blog

প্যাথেটিক হোমিওপ্যাথি, কেন বিশ্বাস রাখছেন!

মৃতবৎসা জোছনার কাল

তোমার জন্যে শুভ্র গোলাপ, বেড়ালতমা -হামিম কামাল