হারিয়ে যাওয়া...

আমার একটা অদ্ভুত স্বভাব হল, আমি পত্রিকায় নিখোঁজ সংবাদগুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখি। বেশিরভাগ একই রকম, অমুকের তিরোধানে বয়োঃজৈষ্ঠ কারও স্বাস্থ্যের অবনতির বিবরণ দেখিয়ে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলিং এবং পলাতক ব্যক্তির যাবতীয় অপরাধ ক্ষমা করে দেয়ার আশ্বাস। সাথে যদি সন্ধানদাতাকে মোটা অংকের পুরস্কার দেয়ার প্রতিশ্রূতি থাকে তাহলে আমি উৎসাহ বোধ করি। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সংখ্যাটি নিদৃষ্ট করে বলে না দেয়ায় সহসাই উৎসাহে ভাটা পড়ে এবং আমি তখন মৃত্যুসংবাদ গুলোতে মনোনিবেশ করি। মৃত্যুসংবাদ গুলো আমাকে ভাবায়। একজন মানুষ আচমকা গাড়ির নিচে পড়ে মারা গেল বা অধিক চর্বিযুক্ত খাবারের প্রতি আসক্তি থেকে সাধের হৃৎযন্ত্রটার সুরেলা স্পন্দন থেকে বঞ্চিত হল চিরতরে, অথবা কোন এক বিকেলে চঞ্চল বালক ছাদে ঘুড়ি ওড়াতে গিয়ে পা পিছলে পথচারীদের যুগপৎ বিরক্তি এবং কৌতুহলের কারণ হল, এসব দুঃসংবাদ আমাকে জীবনের প্রতি মোহগ্রস্থ করে তোলে।
*
আজকের পত্রিকায় একটি বিশেষ নিখোঁজ সংবাদের প্রতি আমার দৃষ্টি আকৃষ্ট হল। শিরোনামে দেয়া আছে নিখোঁজ সংবাদ কিন্তু ভেতরের সার অংশ পড়ে মনে হবে মৃত্যু সংবাদ। এক কিশোরের খোঁজ চেয়েছে তার ধনাঢ্য বাবা-মা। সেখানে কিশোরের অন্তর্ধান নিয়ে উদ্বেগ আছে সেই সাথে উল্লেখ করা আছে কিশোরটি যেন কোনভাবেই না মরে যায়। বারবার এভাবে মরে যাওয়াকে বরদাস্ত করা হবেনা বলেও হুমকি দেয়া আছে। বেশ কৌতূহলউদ্দীপক ব্যাপার বটে। এমনটা আগে দেখিনি। কিশোরের বর্ণনাটাও অদ্ভুত। সন্ধানকারীদের চেনার সুবিধার্থে সাধারণত জন্মদাগ বা উচ্চতা বা অন্যকিছু দেয়া থাকে। কিন্তু এখানে সেরকম কিছু ছিলোনা।
#
আমি এসব জটিলতায় আমোদ পাই। অদ্ভুত কিশোর এবং তার পরিবারকে দেখার এক উদগ্র ইচ্ছে চেপে বসে আমাতে। তাই সকালটা কুমারী থাকতে থাকতেই পদব্রজে শহর ঘুরে চেছে ফেলার পরিকল্পনা করি। যেরকম বর্ণনা দেয়া হয়েছে, তাতে খুঁজে পেলেও পেতে পারি সেই কিশোরকে। প্রাথমিক পর্যায়ের চুড়ান্ত পরীক্ষায় আশি শতাংশ নম্বর পাওয়া কিশোর, পুড়িয়ে মুখমন্ডলে খোদাই করে দেয়া আছে সাফল্যের এ স্বীকৃতি। পশ্চিমা দেশের র‌্যাঞ্চগুলোতে যেরকম গরুর পশ্চাদ্দেশে ব্র্যান্ড খোদাই করে দেয়া থাকে যে, "এ আমার পশু", সেরকম "এ আমাদের শিশু", আমি মনে মনে অভিভাবকদের সাবধানতা এবং দূরদর্শীতার তারিফ করি। বর্ণনায় আরো ছিলো তার পরিধেয় বস্তু সম্পর্কে কিছু কথা। হারিয়ে যাবার সময় তার পরনে ছিলো অসমাপ্ত পাঠ্যপুস্তকের কাগজ থেকে তৈরী পোষাক। আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রাখা স্বত্বেও কিভাবে সে তিরোধানে সক্ষম হল এতে বিস্ময়ের প্রকাশ ছিলো বিজ্ঞপ্তিটায়। অপ্রাসঙ্গিকভাবে এ শঙ্কা এবং উষ্মাও প্রকাশ করা হয়েছিলো যে, পাঠ্যপুস্তকের পৃষ্ঠাগুলো বালক-বালিকাদের বেঁধে রাখার জন্যে যথেষ্ঠ শক্তিশালী হচ্ছেনা। হয়তোবা এ ব্যাপারে আমরা সম্পাদকীয় দেখতে পাবো অচিরেই। তবে সম্পাদকীয় আমি পড়িনা। আমি নিখোঁজ মানুষদের খুঁজে বেড়াই। হয়তোবা নিজেকে খুঁজে পাইনা বলেই।
তাকে খুঁজে পেতে আমার খুব একটু বেগ পেতে হলনা। সেই আমার কাছে এসে ধরা দিলো। দুপুরের কড়া রোদে অনেকপথ হেঁটে শ্রান্ত হয়ে যখন আমি বিশ্রাম নিচ্ছিলাম শহরের অপেক্ষাকৃত সবুজ এবং নির্জন একটি জায়গায়, তখন তার দেখা পাই।
"আপনি কি আমাকে একটু সাহায্য করবেন?" আপাদমস্তক কালো কাপড়ে ঢাকা একটা মাঝারি অবয়ব থেকে কিশোরসূলভ আকূতি ভেসে আসায় আমার মনে আর সন্দেহ থাকেনা যে, ছদ্মবেশের আড়ালে কে লুকিয়ে আছে। এতটা নিঃসন্দেহ হবার কোন কারণ ছিলোনা যদিও, তবু আমি বুঝতে পারি। তার প্রশ্ন এবং প্রতিক্রিয়ায় আমার ভাবনাকালীন নীরবতায় সে অস্থির হয়।
"প্লিজ আমাকে একটু সাহায্য করুন..'
ভাবনাগুলো গুছিয়ে নেবার পরে আমি মুখ খুলি,
"কিরকম সাহায্য?"
সে তৎক্ষণাৎ তার কালো কাপড়ের ছদ্মবেশ খুলে ফেলে। আমার ধারণা সঠিক। এটাই সেই ছেলে। ভালোভাবে ব্র্যান্ড করা। কপালে খোদাই করা আশি শতাংশের গৌরব তিলক আর দেহে শক্তিশালী পাঠ্য কাগজের বুনন।
"আমি আজকের খবরের কাগজ পড়েছি" সত্য কথাটা বলে দিই তাকে।
"সেসব আমি ভাবিনি, কিছু এসে যায়না তাতে, কিন্তু আমার সাহায্য প্রয়োজন ছিলো, তাই আপনাকে বেছে নেয়ার ঝুঁকিটা নিলাম। কিভাবে এই কাগুজে বাঁধন আর বিশ্রী কপাল তিলকটা থেকে মুক্তি পাবো জানলে বলেন"
"খবরটা পড়ার সময় তোমার অভিভাবকদের সচেতনতার প্রশংসা করেছিলাম আমি মনে মনে। আমি বুঝতে পারছিনা ভুলটা কোথায় করেছেন তারা। এসবইতো তোমার ভালোর জন্যে করা। তোমার দেহের প্রতিটা অঙ্গ তোমাকে একজন আদর্শ ছেলে হিসেবে সত্যায়িত করছে"
নিখোঁজ মানুষের মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে ফিরি। কারণ আমি নিজেও হারিয়ে ফেলেছি পরিচয়, বাসস্থান এবং আদর্শ। তাই কিছুক্ষণ আগে দেয়া আমার জ্ঞানগম্ভীর ভাষণের অসার এবং নির্দয় দিকটি কিয়ৎক্ষণের মধ্যেই অনুধাবন করি।
"এসো আমার সাথে, দেখি কি করা যায়"
তার হাঁটতে কষ্ট হচ্ছিল বলে আমি সহায়তা করি। তাকে নিয়ে যাই পার্কের শেষপ্রান্তের টলটলে হ্রদের দিকে।
"এখানে একটা ডুব দিয়ে এসো। আর কচুরিপানা দিয়ে পানিটুকু মুছে ফেলো।"
"কি হবে এতে?"
"দেখাই যাক না কি হয়! যাও তো!"
সে ইতস্তত করে ডুব দেয়। হ্রদটি ছিলো অনেক গভীর, এবং শহুরে সন্ত্রাসে আহত কৈশোর সাঁতরাতে অপটু হবে, সে তো জানতামই! তাই সে তলিয়ে যেতে থাকে, জলের গভীর থেকে বুদ্বুদ আর জলীয় অবিন্যস্ত মৃত্যু চিৎকার ভেসে আসলে আমি মোটেও অবাক হইনা।
"মারা যাও, শিগগীর মারা যাও!" আমি তাগাদা দিই তাকে। টলটলে জলে আলোড়ন ওঠে। তবে এবার শুধু সেই কিশোরের মৃত্যুকালীন উল্লম্ফন নয়, হ্রদের সহৃদয় কচুরিপানা, অলস সময় কাটানো হাঁস আর মৎস প্রজাতি তাদের এহেন অতিথিকে বাঁচানোর জন্যে তৎপর হয়। তারা প্রথমেই তার শক্ত কাগুজে বাঁধন খুলে দেয়। শাপলা আর কচুরিপানা পরিবারের ছোট্ট ছেলেমেয়েরা তার গায়ের পোষাক হিসেবে সেঁটে থাকে। আর কপালের খোদাইকৃত অংশে পড়িয়ে দেয় শালুক ফুল। অতঃপর সে কিছুটা উপরে উঠে আসলে একটা মাছরাঙা পাখি এসে তার কঠিন চষ্ণুর আলতো আদুরে আশ্রয়ে তাকে নিয়ে এসে পৌছে দেয় আমার কাছে।
"কেমন বোধ করছ এখন?" আমি জিজ্ঞেস করি। জিজ্ঞাস করে ওঠে হ্রদের সমস্ত স্থায়ী অতিথি।
সে তার নতুন বেশের দিকে অবাক হয়ে তাকায়। কৃতজ্ঞতার দৃষ্টি নিবদ্ধ করে আমি সহ অন্য সমস্ত ত্রাণকর্তাদের। তবে একমাত্র আমিই ছিলাম তার কৃতজ্ঞ চোখের ভাষা পড়ে নিতে। হ্রদের বাকি সমস্ত প্রাণী ততক্ষণে তাদের দৈনন্দিন কর্মকান্ডে অংশ নিয়েছে।
" কি বলে আপনাকে ধন্যবাদ জানাবো?"
"কিছু বলতে হবেনা"
" না, কিছু একটা তো বলতে হবেই। Dear sir, I am very pleased that you have saved my life......"
হঠাৎ করে সবুজ সবুজ গাছ ফ্যাকশে হয়ে ওঠে, নীল নীল আকাশে মেঘের জলদগম্ভীর আওয়াজ শোনা যায় আর শান্ত হ্রদের জলে আবারও আলোড়ন সৃষ্টি হয়।
সে তার ভুল বুঝতে পারে। আমিও আর তাকে বকুনি দেয়ার ইচ্ছে অনুভব করিনা।
আমি হারিয়ে যাওয়া মানুষ খুঁজে ফিরি আমাকে অন্যদের ভেতরে।
সে আর ওসব ফর্মালিটির তোয়াক্বা করেনা। ঝপাং করে লাফিয়ে পড়ে হ্রদের জলে আনন্দসূচক শব্দ করে। একটু আগের অপটু ছেলেটা চমৎকার সাঁতরাতে থাকে।
কিন্তু পরিবেশটা একটু ভীতিপ্রদ হয়ে ওঠে যখন আকাশে একদল বাজপাখী চক্ক্বর দিতে থাকে। ওদের অভিপ্রায় বুঝতে পেরে আমি চিৎকার করে ডাকি উঠে আসতে। সেও বুঝতে পেরে পড়িমড়ি করে উঠে আসে জল থেকে। এরপর দে ছুট!
#* এরপরে আমরা একটা কাঠঠোকড়ার বাসায় আশ্রয় নিই। তাকে সময় দিই সুস্থির হবার। আরো কিছু জানার বাকি রয়েছে যে আমার।
"পত্রিকার খবরটাতে মৃত্যু বিষয়ক কি যেন লেখা দেখলাম। তোমাকে আরেকবার মরতে নিষেধ করা হয়েছে!"
"আর বলবেন না! আমি কি নিজের থেকে মরতে চাই? ওরাই তো আমাকে বারবার মেরে ফেলে, আর এখন দোষ দিচ্ছে আমার" ফুঁসে ওঠে কিশোর।
"খোলাসা করে বলবে কি?"
"না!" গোঁ ধরে থাকে সে।
এরপরে অবশ্য সে বিড়বিড় করে অনেক কথাই বলে যার কোন মানে আমি বুঝিনা ভালোমত।
"কি বলছ একটু স্পষ্ট করে বলনা?"
"কি বলব! বাবা শোয় কাজের মেয়ের সাথে, মা শোয় বাবার কলিগের সাথে, দুজনের সারাদিন হাজারটা কাজ। কেউ একটুও সময় দেয়না আমাকে। কিন্তু আমার কাছ থেকে তাদের প্রাপ্য সবই কড়ায় গন্ডায় আদায় করে নেবে। ওরা প্রতিদিন আমাকে একটা ডিকশনারির পাতা খেতে দেয়। আর প্রাইভেট টিউটরটা তো আরো এক কাঠি সরেশ! সে আমাকে যাবতীয় সুত্র, উপপাদ্য মুত্রের মত পানিতে মিশিয়ে খাওয়ায়, ওয়াক!"
"যা হোক, এখন কেমন লাগছে বল, এই নন ব্র্যান্ডেড অবস্থায়, কচুরিপানার পোষাক আর শালুক পাখির মুকুট পরে?"
তার উত্তর দেয়ার আগেই বেরসিক কাঠঠোকরাটা চলে আসে, খনখনে গলায় বলে,
"বলি সারাদিন দুজন আমার ঘর দখল করে রেখেছো এ কেমন কথা? না আতিথেয়তা করতে আমার কোন আপত্তি নেই, কিন্তু আরো কত কিছু দেখার বাকি, সাঁঝ তো হয়ে এলো বলে। যাওনা, ছেলেটাকে একটু সুর্যাস্ত দেখিয়ে আসো"
কাঠঠোকরার পরামর্শটা বেশ ভালো লাগে আমার।
"এই চল উঠি। সূর্যাস্ত দেখবো।"
এবার আমরা একটা খোলা মাঠের সামনে এসে পড়ি। সেখানে কিশোরের দল নানাবিধ ক্রীড়ায় মত্ত। আমার সাথের জন চঞ্চল হয়ে ওঠে এ দেখে। সেও খেলতে যেতে চায় ওদের সাথে। কিন্তু ততক্ষণে খেলা প্রায় শেষ হয়ে আসায় কেউ তাকে দলে নিতে উৎসাহী হয়না। মুখ গোমড়া করে এসে সে আমার পাশে বসে।
"আচ্ছা তোমার বয়স কত? তুমি কর কি?"
আর কিছু না পেয়েই হয়তোবা সে এই প্রশ্নটা করে বসে। কিন্তু আমার জন্যে এটা অতটা সহজ প্রশ্ন ছিলোনা। আমি জানিনা আমার পরিচয়। আমি হারিয়ে যাওয়া মানুষ। আমি পরিচয় খুঁজে ফিরি নিখোঁজদের মাঝে। কিন্তু এসব তাকে কিভাবে বোঝাই! আমি সংশয় বোধ করি কিশোরটিকে নিয়ে। তার প্রকৃত পরিচয় আমাকে জানতেই হবে। তাকে এভাবে বিশ্বাস করাটা বোধ হয় ঠিক হচ্ছেনা। ভাবার সাথে সাথেই কাজ। তাকে আমি টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যেতে থাকি পত্রিকায় উল্লেখিত বাসস্থানের দিকে। সবুজ মাঠ পার হয়ে যাই। পিচ ঢালা, কর্কশ এবড়ো থেবড়ো, কংক্রিটের রাস্তার সংস্পর্শে সে চিৎকার করে ওঠে। তার কচুরিপানার পোষাক খুলে যায়। রাজপথে খোদিত নিয়তির ধারাল অক্ষরে আর নিয়ন আলোর তীব্র একমুখি প্রবাহ তাকে আবার কেতাদূরস্ত করে তোলে।
***
অবশেষে আমি অভীষ্ঠ গন্তব্যে পৌঁছুই। তার বাবা মা ছিলো বিষাদাক্রান্ত। কিশোরটিকে ফিরে আসতে দেখে তাদের মুখ বিজয়ের আনন্দে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে।
তাদের আনন্দ দুই ধারায় বিকশিত হয়। প্রথমত তারা তাদের স্ট্যাটাস সিম্বল খুঁজে পাওয়ায় উল্লসিত হয় এবং পরে বাৎসল্যের আবেগে দ্রবিভূত হয়। তার মা কিছুটা কাঁদার সিদ্ধান্ত নেয়, সাথে এ হিসেবও করে যে কতটুকু কাঁদলে তার মুখের সাজসজ্জা অনর্থক লবণাক্ততায় ভেসে যাবেনা। আজ রাতে যে একজনের আসার কথা। পাশের ঘরে। ছেলেটার পাশের ঘরে। নিস্তব্ধ বাসায়। আর বাবা ভাবে তাৎক্ষণিক একটা সেলিব্রেশন পার্টি করলে কেমন হয়? তারা আবেগ উচ্ছাসের ঝটিকানুষ্ঠান শেষ করে আসল অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করে এবং মুহুর্তেই তা বাস্তবায়ন করতে লেগে যায়।
###
মা ছেলেকে ভেতরে নিয়ে গিয়েছে আসন্ন সেলিব্রশন পার্টির জন্যে সাজিয়ে নিতে। সেই ফাঁকে বাবা আমার সাথে ছেলেটার কুকর্মের ফিরিস্তি দিচ্ছে।
"এর আগেও এরকম হয়েছে বুঝলেন! এ কে নিয়ে কি করি বলেন তো? এই তো মাস দুয়েক আগে কমিক বই কিনে দেইনি বলে মারা গেলো। এই দেখুন কঙ্কাল। তারও কিছুদিন আগে পাশের ঘরে কি না কি আবোল তাবোল দেখেছে অনুযোগ করায় তার মা রেগেমেগে এমন মারটা দিলো যে মরেই গেলো। এই দেখুন কঙ্কাল। তার পরে আমার ইয়ে....মানে একদিন আমিও রেগে একটু বকুনি দিয়েছিলাম তাতেই মরে গেলো। একে আর এর কঙ্কালগুলোকে নিয়ে আর পারছিনা বুঝলেন?"
#**#
পার্টির জমজমাট আসরে বেশ মানিয়ে নিয়েছি আমি। টুং টাং, হাই হ্যালো, ক্লিভেজ দর্শন, আর কারো কারো মদির দৃষ্টিতে আমি বড়ই উৎফুল্ল। তবে সর্বশেষ আকর্ষণ এখনও বাকি রয়েছে। পার্টি বয়কে একটু পর নিয়ে আসা হবে সুসজ্জিত করে। আমরা ব্যাপক করতালি দেয়ার প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছি। কিন্তু গুবলেট করে বসল বোকা মহিলাটা। সে তার ছেলেকে নিয়ে আসার বদলে স্টোররুম থেকে একটা কঙ্কাল নিয়ে এলো। তার শুন্য চক্ষুকোঠর আর বিকশিত দন্ত দেখে আমরা ভয় পেলাম। সবার মধ্যে এক ভয়াবহ ত্রাসের সৃষ্টি হল। এটা দেখে আরো দুটো কঙ্কাল উঠে এলো প্রবল উৎসাহে। কঙ্কালগুলো ছিলো ভীষণ প্রাণোচ্ছল, আর কিশোরটি ছিলো ঠিক ততটাই মৃতবৎ।
****
মানুষগুলো সব হারিয়ে যায়। শুধু থাকে কঙ্কালত্রয়, সেই বিষণ্ণ কিশোর আর আমি। আমি বুঝিনা কাদের মাঝে নিজের পরিচয় খুঁজে নেবো। কাদেরকে অনুসরণ করব। আমি হারিয়ে যাওয়া মানুষ, আমার আদর্শ, নৈতিকতা, এবং অতীত বেমালুম ভুলে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি অন্ধকার হয়ে আসা ড্রয়িংরুমে স্থানুর মত। সেখানে এখন কেউ নেই। কিছু নেই।

Comments

Popular posts from this blog

প্যাথেটিক হোমিওপ্যাথি, কেন বিশ্বাস রাখছেন!

মৃতবৎসা জোছনার কাল

তোমার জন্যে শুভ্র গোলাপ, বেড়ালতমা -হামিম কামাল