আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের স্মৃতিকথা
আমি পড়তাম দেশের একটি সরকারি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলাম প্রকৌশল এর যাবতীয় কলাকৌশল শেখার মহান ব্রত নিয়ে। পড়াশোনার অত্যন্ত চাপ ছিলো। ক্লাশ,সেশনাল,লাইব্রেরি ওয়ার্ক এবং প্রতিদিনের বিদ্যাসাধনা শেষে আমরা কিছুই করার অবসর পেতামনা।বেশিরভাগ দিনই সকাল আটটায় ক্লাশ থাকতো। আমরা সাধারণত ছটার সময়ই উঠে পড়তাম।এরপর ক্যান্টিন অথবা হল সংলগ্ন দোকান থেকে কোনরকমে নাকে মুখে কিছু গুঁজে দিয়ে শ্রেণীকক্ষের দিকে হন্তদন্ত হয়ে রওনা হতাম।এত ব্যস্ত হয়ে রওনা হবার কারণ ছিলো,সবাই প্রথম সারির আসনগুলিতে বসতে চাইতো। তাহলে শিক্ষকদের কথা ঠিকমত শ্রবণ করতে সুবিধে হবে।
ক্লাশ চলাকালিন সময়ে আমরা মন্ত্রমুগ্ধের মত শিক্ষকদের মুখনিঃসৃত বাণী শুনতাম। সময় যে কিভাবে কেটে যেত,টেরই পেতামনা! কারণ প্রকৌশলবিদ্যার গভীর থেকে গভীরতর ব্যাপারগুলোতে আমরা এমনভাবে ডুবে যেতাম,যে বাস্তব পৃথিবীর সাথে আমাদের কোন যোগসূত্রই থাকতোনা। অধিকাংশ সময় আমরা শিক্ষকদিগকে অনুরোধ করতাম আমাদের আরো পাঁচ দশ মিনিট সময় বেশি দিতে,যেন আমাদের জ্ঞানপিপাসু মনগুলি পরিপূর্ণভাবে পরিতৃপ্ত হয়। কোন পিরিয়ডের পর ফাঁকা থাকলে আমরা শিক্ষকদিগকে অনুরোধ করতাম অতিরিক্ত ক্লাশ নিতে। কোন কারণে কোনও শিক্ষকের আসতে বিলম্ব ঘটলে আমাদের মধ্যে মৃদু অসহিষ্ণুতা দেখা দিত। ক্রমশঃ তা উদ্বেগে পরিণত হত।সত্যি সত্যিই ক্লাশ মিস হয়ে গেলে সবাই নিজের ভাগ্যকে দোষারোপ করতাম ।সেদিন সবার মনটাই খারাপ হয়ে যেত :( ।
আমাদের জন্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বলে বিবেচিত ছিল সেশনাল বা ব্যবহারিক ক্লাশগুলো। অনেকেরই অভিযোগ ছিলো সেশনাল ক্লাশগুলো মাত্র আড়াই ঘন্টার কেন হল?(কেন কেন কেন?) পাঁচঘন্টার হলে আমরা আরো বেশি জ্ঞান অর্জন করতে পারতাম:| এ কথার যৌক্তিকতা কেউ অস্বীকার করতে পারবেনা, আমি "জোড়" দিয়ে বলতে পারি।
সেশনাল ক্লাশ শেষে আমাদের পরবর্তী ক্লাশের জন্যে রিপোর্ট বা প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে হত।আমরা ক্লাশ থেকে ফিরেই ওই কাজে লেগে যেতাম। সবাই যার যার প্রতিবেদন নিজেরাই লিখতাম,এবং অন্যকারো সাথে যেন বিন্দুমাত্র মিলে না যায়, সে ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্ক থাকতাম।
আমাদের অবসর সময় কেটে যেত গ্রন্থাগারে জ্ঞানচর্চা করে। অধিকাংশ শিক্ষক প্রায় দশ-বারোটা করে বইয়ের রেফারেন্স দিতেন,আমরা প্রত্যেকটা বই থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নোট করে নিতাম, এবং পরস্পরের সাথে উক্ত বিষয়ে মত বিনিময় করতাম। অনেকেই উচ্চতর এবং উন্নত জ্ঞানচর্চার জন্যে ইন্টারনেটে বসত। কেউ ভুলেও সেখানে আজেবাজে ওয়েব সাইট ব্রাউজিং বা চ্যাটিং করতনা। শুধুমাত্র শিক্ষামূলক সাইটগুলোর সন্ধানে সবাই ব্যতিব্যস্ত থাকতো।
দুপুরের মধ্যে ক্লাশ শেষ হয়ে গেলে আমরা ঘন্টাখানেক বিশ্রাম অথবা দিবানিদ্রা দিয়ে পড়তে বসতাম। বিকেল বেলায় পত্র-পত্রিকা পাঠ(সিনেমা পত্রিকা ব্যতিরেকে), হালকা নাস্তা এবং একটু হাঁটাহাঁটি করে আমরা নিজ নিজ হলে প্রত্যাবর্তন করে হাত মুখ ধুয়ে পুনরায় পড়তে বসতাম।
আমাদের হলের টিভিতে ডিশের সংযোগ ছিলো। আমরা নিয়মিত বিবিসি, ডিসকভারির মত শিক্ষামূলক চ্যানেল দেখতাম। নাচ,গান,নাটক বা খেলা খুব কম ছেলেই দেখত। কারণ সেখানে শিক্ষামূলক কিছু থাকেনা। যারা এসব দেখত আমরা তাদের তীব্র ধিক্কার জানাতাম।X( এর ফলে তাদের চক্ষে পানি এসে যেত।:#(
অনেকের রুমেই কম্পিউটার ছিলো। রিপোর্ট প্রিন্ট করা বা প্রোগ্রামিং এর কাজে কম্পিউটার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। কেউ গেমস খেলে বা সিনেমা দেখে ছাত্রজীবনের মূল্যবান সময় নষ্ট করতনা।:-#
সবশেষে ক্লাশরুমে লেখা একটি অতিশয় উচ্চমার্গের কবিতা দিয়ে আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের স্মৃতিচারণ এখানেই শেষ করছি। দোআগো।
[su] স্যার আজকে থাক[/su]
স্যার আজকে থাক
অনেক জ্বালিয়েছেন জ্ঞানের আগুন
সেই আগুনে আমরা পুড়ে খাক!
স্যার আজকে যান
কি যে বলেন,বুঝিনা কিছুই
ছটফট করে আমাদের তাজা প্রাণ!
মাফ করে দ্যান স্যার
এক্সট্রা টাইমের লেকচার শুনে
মগজে কোন সাড়া পাইনা আর।
ঘুমোয় সারা ক্লাশ
বাজতে থাকে ভাঙা রেকর্ড
নেক্সট সেমিস্টার ব্যাকলগে হাঁসফাঁস:#(
ক্লাশ চলাকালিন সময়ে আমরা মন্ত্রমুগ্ধের মত শিক্ষকদের মুখনিঃসৃত বাণী শুনতাম। সময় যে কিভাবে কেটে যেত,টেরই পেতামনা! কারণ প্রকৌশলবিদ্যার গভীর থেকে গভীরতর ব্যাপারগুলোতে আমরা এমনভাবে ডুবে যেতাম,যে বাস্তব পৃথিবীর সাথে আমাদের কোন যোগসূত্রই থাকতোনা। অধিকাংশ সময় আমরা শিক্ষকদিগকে অনুরোধ করতাম আমাদের আরো পাঁচ দশ মিনিট সময় বেশি দিতে,যেন আমাদের জ্ঞানপিপাসু মনগুলি পরিপূর্ণভাবে পরিতৃপ্ত হয়। কোন পিরিয়ডের পর ফাঁকা থাকলে আমরা শিক্ষকদিগকে অনুরোধ করতাম অতিরিক্ত ক্লাশ নিতে। কোন কারণে কোনও শিক্ষকের আসতে বিলম্ব ঘটলে আমাদের মধ্যে মৃদু অসহিষ্ণুতা দেখা দিত। ক্রমশঃ তা উদ্বেগে পরিণত হত।সত্যি সত্যিই ক্লাশ মিস হয়ে গেলে সবাই নিজের ভাগ্যকে দোষারোপ করতাম ।সেদিন সবার মনটাই খারাপ হয়ে যেত :( ।
আমাদের জন্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বলে বিবেচিত ছিল সেশনাল বা ব্যবহারিক ক্লাশগুলো। অনেকেরই অভিযোগ ছিলো সেশনাল ক্লাশগুলো মাত্র আড়াই ঘন্টার কেন হল?(কেন কেন কেন?) পাঁচঘন্টার হলে আমরা আরো বেশি জ্ঞান অর্জন করতে পারতাম:| এ কথার যৌক্তিকতা কেউ অস্বীকার করতে পারবেনা, আমি "জোড়" দিয়ে বলতে পারি।
সেশনাল ক্লাশ শেষে আমাদের পরবর্তী ক্লাশের জন্যে রিপোর্ট বা প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে হত।আমরা ক্লাশ থেকে ফিরেই ওই কাজে লেগে যেতাম। সবাই যার যার প্রতিবেদন নিজেরাই লিখতাম,এবং অন্যকারো সাথে যেন বিন্দুমাত্র মিলে না যায়, সে ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্ক থাকতাম।
আমাদের অবসর সময় কেটে যেত গ্রন্থাগারে জ্ঞানচর্চা করে। অধিকাংশ শিক্ষক প্রায় দশ-বারোটা করে বইয়ের রেফারেন্স দিতেন,আমরা প্রত্যেকটা বই থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নোট করে নিতাম, এবং পরস্পরের সাথে উক্ত বিষয়ে মত বিনিময় করতাম। অনেকেই উচ্চতর এবং উন্নত জ্ঞানচর্চার জন্যে ইন্টারনেটে বসত। কেউ ভুলেও সেখানে আজেবাজে ওয়েব সাইট ব্রাউজিং বা চ্যাটিং করতনা। শুধুমাত্র শিক্ষামূলক সাইটগুলোর সন্ধানে সবাই ব্যতিব্যস্ত থাকতো।
দুপুরের মধ্যে ক্লাশ শেষ হয়ে গেলে আমরা ঘন্টাখানেক বিশ্রাম অথবা দিবানিদ্রা দিয়ে পড়তে বসতাম। বিকেল বেলায় পত্র-পত্রিকা পাঠ(সিনেমা পত্রিকা ব্যতিরেকে), হালকা নাস্তা এবং একটু হাঁটাহাঁটি করে আমরা নিজ নিজ হলে প্রত্যাবর্তন করে হাত মুখ ধুয়ে পুনরায় পড়তে বসতাম।
আমাদের হলের টিভিতে ডিশের সংযোগ ছিলো। আমরা নিয়মিত বিবিসি, ডিসকভারির মত শিক্ষামূলক চ্যানেল দেখতাম। নাচ,গান,নাটক বা খেলা খুব কম ছেলেই দেখত। কারণ সেখানে শিক্ষামূলক কিছু থাকেনা। যারা এসব দেখত আমরা তাদের তীব্র ধিক্কার জানাতাম।X( এর ফলে তাদের চক্ষে পানি এসে যেত।:#(
অনেকের রুমেই কম্পিউটার ছিলো। রিপোর্ট প্রিন্ট করা বা প্রোগ্রামিং এর কাজে কম্পিউটার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। কেউ গেমস খেলে বা সিনেমা দেখে ছাত্রজীবনের মূল্যবান সময় নষ্ট করতনা।:-#
সবশেষে ক্লাশরুমে লেখা একটি অতিশয় উচ্চমার্গের কবিতা দিয়ে আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের স্মৃতিচারণ এখানেই শেষ করছি। দোআগো।
[su] স্যার আজকে থাক[/su]
স্যার আজকে থাক
অনেক জ্বালিয়েছেন জ্ঞানের আগুন
সেই আগুনে আমরা পুড়ে খাক!
স্যার আজকে যান
কি যে বলেন,বুঝিনা কিছুই
ছটফট করে আমাদের তাজা প্রাণ!
মাফ করে দ্যান স্যার
এক্সট্রা টাইমের লেকচার শুনে
মগজে কোন সাড়া পাইনা আর।
ঘুমোয় সারা ক্লাশ
বাজতে থাকে ভাঙা রেকর্ড
নেক্সট সেমিস্টার ব্যাকলগে হাঁসফাঁস:#(
Comments
Post a Comment