যন্ত্রণাহীনতার যন্ত্র মন্ত্র
বরাবরই একটা যন্ত্রণাবিহীন দিনের স্বপ্ন দেখে এসেছে পাকস্থলীর সংক্রমণে আক্রান্ত ভুক্তভোগীরা অম্লের অবিরল গরলতায়, দীর্ঘদিন লিখতে না পারার ব্যর্থতায় সংকুচিত হয়ে থাকা কবি, যদিও তাকে এজন্য কারো কাছে জবাবদিহি করতে হবেনা, বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কর্মরত তরুণ সদাগরদের পণ্যের জন্যে স্তুতিবাক্যমূলক বিজ্ঞাপন লিখতে লিখতে, যদিও সে এটার জন্যে মোটা টাকা পায়, টাকা শব্দটি স্থূল, এর স্থলে রেমুনারেশন বলা যেতে পারে, হ্যালুসিনেশনে ভোগা দূর্বলচিত্তের ব্যর্থ প্রেমিক, রাত্তিরে ঘুমানোর সময় যাকে একজন সর্পিনী এবং অগ্নিনীর গ্রাস থেকে নিজেকে বাঁচাতে সংগ্রাম করতে হয়।
অবশ্য আমরা আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা উন্নত করতে ক্রমাগত কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের যন্ত্রণাকে লুকোতে অথবা আরো বৃহত্তর যন্ত্রণার কাছে সমর্পিত না হবার জন্যে আমরা যন্ত্রের, কৃত্রিম রাসায়নিক উপাদানের দ্বারস্থ হই।
দ্বার খোলা আছে কারখানার। এখান থেকে যে যত পারো নিয়ে যাও,ইচ্ছেমত। কারো প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত নয়।
*
আজকে আমার মন খুব খারাপ। শরীরটাও ক্লান্ত। অথচ কালকে ঠিকই যেতে হবে কর্মস্থলে, সময়মত।
ঘুমুতে হবে ঠিকমত। ঘুম আসছেনা! উঠতে হবে সময়মত। পারবো কি? হিসেব কষতে হবে অজস্র। কিন্তু মাথা কাজ করছেনা মোটেও। উদাস, অলস, অর্থহীন মুহুর্তগুলো সম্বিত ফিরে পায় কারখানার সাইরেনের শব্দে। আর বেশি দেরী করলে কিছু পাওয়া যাবেনা। আমি ক্লান্ত শরীরটাকে কোনমতে বয়ে নিয়ে চলি।
আজকে আমার মন খুব খারাপ। শরীরটাও ক্লান্ত। অথচ কালকে ঠিকই যেতে হবে কর্মস্থলে, সময়মত।
ঘুমুতে হবে ঠিকমত। ঘুম আসছেনা! উঠতে হবে সময়মত। পারবো কি? হিসেব কষতে হবে অজস্র। কিন্তু মাথা কাজ করছেনা মোটেও। উদাস, অলস, অর্থহীন মুহুর্তগুলো সম্বিত ফিরে পায় কারখানার সাইরেনের শব্দে। আর বেশি দেরী করলে কিছু পাওয়া যাবেনা। আমি ক্লান্ত শরীরটাকে কোনমতে বয়ে নিয়ে চলি।
এসময়টায় প্রচন্ড ভীড় থাকে। পিক আওয়ার। ইনসমনিয়াকরা আসে ঝিমুতে ঝিমুতে। বিশেষ প্রয়োজনেও আসে কেউ কেউ আমার মত, হঠাৎ করে যাদের একমুঠো ঘুমের প্রয়োজন পড়েছে।
-এইগুলা ভালো না। ঘুম আসে, স্বপ্ন আসেনা।
একজন চোখ ডলতে ডলতে বলে।
-দরকারটাই বা কি স্বপ্নের!
আমি আর বেশি কথা না বাড়িয়ে এগুই। একটা এ্যালার্ম ঘড়ি কেনা বিশেষ দরকার। নাহলে কালকে সময়মত ঘুম থেকে উঠতে পারবোনা। আর একটা ক্যালকুলেটর। অনেক হিসেব কষতে হবে কাল।
আবারও সাইরেন বাজে। এখন আমাদের যেতে হবে। কারখানা অবশ্য সারারাতই খোলা থাকবে। এখন আসবে নতুন আরেকদল মানুষ বিবিধ প্রয়োজনে।
-এইগুলা ভালো না। ঘুম আসে, স্বপ্ন আসেনা।
একজন চোখ ডলতে ডলতে বলে।
-দরকারটাই বা কি স্বপ্নের!
আমি আর বেশি কথা না বাড়িয়ে এগুই। একটা এ্যালার্ম ঘড়ি কেনা বিশেষ দরকার। নাহলে কালকে সময়মত ঘুম থেকে উঠতে পারবোনা। আর একটা ক্যালকুলেটর। অনেক হিসেব কষতে হবে কাল।
আবারও সাইরেন বাজে। এখন আমাদের যেতে হবে। কারখানা অবশ্য সারারাতই খোলা থাকবে। এখন আসবে নতুন আরেকদল মানুষ বিবিধ প্রয়োজনে।
*
সবকিছু ঠিকঠাক আছেতো? আমি মিলিয়ে নিই।
-স্লিপিং পিল
-ক্রেডিট কার্ড
-এ্যালার্ম ক্লক
-সেলফোন
-ক্যালকুলেটর
সবকিছু ঠিকঠাক আছেতো? আমি মিলিয়ে নিই।
-স্লিপিং পিল
-ক্রেডিট কার্ড
-এ্যালার্ম ক্লক
-সেলফোন
-ক্যালকুলেটর
কর্মদিবসের জন্যে এসব হলেই যথেষ্ঠ। উইকেন্ড হলে আরো কিছু জিনিসের দরকার হত, যেমন, ক্যামেরা, সিনেমা, অথবা আরো কড়া ডোজের স্লিপিং পিল ইত্যাদি। আপাতত ওসবের কথা না ভাবলেও চলবে।
একটা স্বল্পমাত্রার ঘুমবটিকা খেয়ে ঘুমিয়ে পড়িগে যাই।
একটা স্বল্পমাত্রার ঘুমবটিকা খেয়ে ঘুমিয়ে পড়িগে যাই।
স্লিপিং পিলটা খেতে যাবো সেসময় হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। কে এলো এত রাত্তিরে?
*
-আশ্চর্য! তুমি?
-কেন আসতে মানা আছে নাকি?
-না তা নেই, কিন্তু এত রাতে, এতদিন পর!
- দেখলাম তুমি ঘুমের কষ্টে ভুগছো খুব।
-হু, তো? এখন নিশ্চয়ই আগেকার মত মাথায় হাত বুলিয়ে দিবেনা!
-দিবো। তবে এর চেয়ে বেশি কিছু চাইতে পারবেনা কিন্তু আগেই বলে দিলাম!
সে দুষ্টু হেসে সতর্ক করে দেয়
-আচ্ছা! তাই সই।
এর চেয়ে বেশি চাওয়াটাই ধৃষ্টতা, কিন্তু তবুও লোভ জাগে, সে যখন আমার চুলে হাত বুলিয়ে দিতে থাকে আমি তাকে জড়িয়ে ধরে তার ঠোঁটে ঠোঁট রাখতে চাই, কিন্তু পরক্ষণেই ঘুমের অতলে তলিয়ে যাই।
-আশ্চর্য! তুমি?
-কেন আসতে মানা আছে নাকি?
-না তা নেই, কিন্তু এত রাতে, এতদিন পর!
- দেখলাম তুমি ঘুমের কষ্টে ভুগছো খুব।
-হু, তো? এখন নিশ্চয়ই আগেকার মত মাথায় হাত বুলিয়ে দিবেনা!
-দিবো। তবে এর চেয়ে বেশি কিছু চাইতে পারবেনা কিন্তু আগেই বলে দিলাম!
সে দুষ্টু হেসে সতর্ক করে দেয়
-আচ্ছা! তাই সই।
এর চেয়ে বেশি চাওয়াটাই ধৃষ্টতা, কিন্তু তবুও লোভ জাগে, সে যখন আমার চুলে হাত বুলিয়ে দিতে থাকে আমি তাকে জড়িয়ে ধরে তার ঠোঁটে ঠোঁট রাখতে চাই, কিন্তু পরক্ষণেই ঘুমের অতলে তলিয়ে যাই।
কি আশ্চর্য সুন্দর ঘুম! কি নিবিড় আর গভীর! কত স্বপ্নের আনাগোনা...স্বপ্নের ভেতরেই দেখি রিলাক্সিন খেয়ে স্যুট টাই এবং জুতা মোজা পরেই ঘুমুতে যাওয়া বিশিষ্ট অফিস এক্সিকিউটিভ এবং কবি, অকবি, প্রেমিক, থেকে নষ্ট প্রজন্মের বিশাল এক মিছিল, যাদের সবার ঈর্ষাকাতর চোখ আমার দিকে। আমি এতে আরো আরাম পেয়ে পাশ ফিরি।
-আরামের সময় আর কতক্ষণ? একটু পরেই তো জাগতে হবে! ফর্মাল পোষাক পরে ফরমায়েশি কাজে বেড়ুতে হবে!
বলে আত্মতৃপ্তির সোল্লাস হাসিতে ফেটে পড়ে পুরো জমায়েতের সবাই।
আমার এ্যালার্ম ঘড়িটা ঠিকমত কাজ করবেতো! সময়মত না যেতে পারলে বিপদ। ঠিকসময়ে এ্যালার্ম দিয়েছি তো! আমার ঘুম পাতলা হতে থাকে অবচেতন মনের অভিভাবকতায়।
-আরামের সময় আর কতক্ষণ? একটু পরেই তো জাগতে হবে! ফর্মাল পোষাক পরে ফরমায়েশি কাজে বেড়ুতে হবে!
বলে আত্মতৃপ্তির সোল্লাস হাসিতে ফেটে পড়ে পুরো জমায়েতের সবাই।
আমার এ্যালার্ম ঘড়িটা ঠিকমত কাজ করবেতো! সময়মত না যেতে পারলে বিপদ। ঠিকসময়ে এ্যালার্ম দিয়েছি তো! আমার ঘুম পাতলা হতে থাকে অবচেতন মনের অভিভাবকতায়।
-এই ওঠো! অফিসে যাবেনা?
সাতটা পাঁচ বাজে। ঘড়ি দেখলাম আমি। এই সময়েই এ্যালার্ম দেয়া ছিলো। কিন্তু তার আর প্রয়োজন পড়লোনা।
-নাস্তায় কি খাবে?
সে জিজ্ঞেস করে।
-প্রতিদিন তো টোস্টারে বানানো আধপোড়া স্যান্ডউইচ খেয়ে যাই, আজ নাহয় অন্যকিছু...
আমি ইঙ্গিতের হাসি দিই।
-আচ্ছা, সে হবে। কোথায় তোমার টোস্টার?
আমি দেখিয়ে দিই।
সে ভাজতে থাকে, তার শরীরের ভাঁজে ভাঁজে ভাজার গন্ধ , উগ্র এবং বন্য হয়ে ওঠে ক্রমশঃ সেটা। স্যান্ডউইচ পুড়ে যায়। শক্ত এবং উত্তপ্ত হয়ে যায়। সে আমার কাছে উত্তাপ নিয়ে আসে। অথবা স্যান্ডউইচ। অথবা আমরাই স্যান্ডউইচ হয়ে যাই!
যাহোক, অন্যদিনের চেয়ে আমার নাস্তাটা বেশ ভালো হয়। আজকে যন্ত্রণা এবং যন্ত্রদের উৎপাত নেই। সবকিছুই হচ্ছে ঠিকমত,ঘুমানো ,ঘুম থেকে ওঠা, নাস্তা ...তবে এসব এতদিনকার যান্ত্রিক নির্ভরশীলতার গন্ডি পেড়িয়ে এক অভাবনীয় বিকল্প কর্তৃক প্রতিস্থাপিত হওয়ায় দিনটা শুরু হয় বেশ ফুরফুরে মেজাজে।
সাতটা পাঁচ বাজে। ঘড়ি দেখলাম আমি। এই সময়েই এ্যালার্ম দেয়া ছিলো। কিন্তু তার আর প্রয়োজন পড়লোনা।
-নাস্তায় কি খাবে?
সে জিজ্ঞেস করে।
-প্রতিদিন তো টোস্টারে বানানো আধপোড়া স্যান্ডউইচ খেয়ে যাই, আজ নাহয় অন্যকিছু...
আমি ইঙ্গিতের হাসি দিই।
-আচ্ছা, সে হবে। কোথায় তোমার টোস্টার?
আমি দেখিয়ে দিই।
সে ভাজতে থাকে, তার শরীরের ভাঁজে ভাঁজে ভাজার গন্ধ , উগ্র এবং বন্য হয়ে ওঠে ক্রমশঃ সেটা। স্যান্ডউইচ পুড়ে যায়। শক্ত এবং উত্তপ্ত হয়ে যায়। সে আমার কাছে উত্তাপ নিয়ে আসে। অথবা স্যান্ডউইচ। অথবা আমরাই স্যান্ডউইচ হয়ে যাই!
যাহোক, অন্যদিনের চেয়ে আমার নাস্তাটা বেশ ভালো হয়। আজকে যন্ত্রণা এবং যন্ত্রদের উৎপাত নেই। সবকিছুই হচ্ছে ঠিকমত,ঘুমানো ,ঘুম থেকে ওঠা, নাস্তা ...তবে এসব এতদিনকার যান্ত্রিক নির্ভরশীলতার গন্ডি পেড়িয়ে এক অভাবনীয় বিকল্প কর্তৃক প্রতিস্থাপিত হওয়ায় দিনটা শুরু হয় বেশ ফুরফুরে মেজাজে।
-যাই, কেমন? তুমি ঘরেই থেকো।
-হ্যাঁ থাকবোরে থাকবো! এতদিন পরে এলাম আর একটা দিন থাকবোনা? যাও এখন, তোমার দেরী হয়ে যাচ্ছে।
-হ্যাঁ থাকবোরে থাকবো! এতদিন পরে এলাম আর একটা দিন থাকবোনা? যাও এখন, তোমার দেরী হয়ে যাচ্ছে।
*
উফ অফিস! ক্লান্তিকর। কখনও কখনও গ্লানিকরও বটে। হিসাবরক্ষকের একঘেয়ে কাজ। একটু ভুল হলেই মান সম্মান এবং চাকুরি নিয়ে টানাটানি। একজন ভালো চাকর হতে আমাদের সে কি চেষ্টা। ফার্স্ট আওয়ারটা মোটামুটি টুকটাক কাজ আর গল্প করে কাটিয়ে দেই আজকে। কিন্তু হিসেব মেলানোর অনিবার্য নিয়তিকে তো আর পাশ কাটানো যায়না! আমি আমার ঢাউস হিসাবকারী যন্ত্র নিয়ে বসি। অনেক হিসেব করা বাকি।
-স্যার আপনার কাছে একজন দেখা করতে এসেছে।
-কে?
আমি খুব বিরক্তির সাথে সুধোই।
কিন্তু আমাদের অফিস প্রটোকল এবং বিরক্তিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে দৃপ্ত এবং রাগত ভঙ্গীমায় একজন বৃদ্ধ প্রবেশ করেন।
-স্যার আপনি!
নাহ, ইনি আমাদের লেফাফাদুরস্ত চোস্ত গোস্তের ব্যবসায়ী ঊর্ধতন না, আমার শৈশবে প্রথম গণিত পাঠ দেয়া শ্রদ্ধেয় শশ্রুমন্ডিত শিক্ষক। আমি তাকে এই দমবন্ধ করা বাইনারি ঘরে দেখে আনন্দিত হই। তার কাছে আমি অসংখ্য সংখ্যা শিখেছিলাম। শিখেছিলাম সংখ্যার সৌন্দর্য্য। আজ আমি যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগ ছাড়া আরো অনেক কিছু জানলেও, হিসেবে পটু হলেও তার কাছে বেতের বাড়ি খেতে হবে নিশ্চিত। এবং তাই হয়!
উফ অফিস! ক্লান্তিকর। কখনও কখনও গ্লানিকরও বটে। হিসাবরক্ষকের একঘেয়ে কাজ। একটু ভুল হলেই মান সম্মান এবং চাকুরি নিয়ে টানাটানি। একজন ভালো চাকর হতে আমাদের সে কি চেষ্টা। ফার্স্ট আওয়ারটা মোটামুটি টুকটাক কাজ আর গল্প করে কাটিয়ে দেই আজকে। কিন্তু হিসেব মেলানোর অনিবার্য নিয়তিকে তো আর পাশ কাটানো যায়না! আমি আমার ঢাউস হিসাবকারী যন্ত্র নিয়ে বসি। অনেক হিসেব করা বাকি।
-স্যার আপনার কাছে একজন দেখা করতে এসেছে।
-কে?
আমি খুব বিরক্তির সাথে সুধোই।
কিন্তু আমাদের অফিস প্রটোকল এবং বিরক্তিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে দৃপ্ত এবং রাগত ভঙ্গীমায় একজন বৃদ্ধ প্রবেশ করেন।
-স্যার আপনি!
নাহ, ইনি আমাদের লেফাফাদুরস্ত চোস্ত গোস্তের ব্যবসায়ী ঊর্ধতন না, আমার শৈশবে প্রথম গণিত পাঠ দেয়া শ্রদ্ধেয় শশ্রুমন্ডিত শিক্ষক। আমি তাকে এই দমবন্ধ করা বাইনারি ঘরে দেখে আনন্দিত হই। তার কাছে আমি অসংখ্য সংখ্যা শিখেছিলাম। শিখেছিলাম সংখ্যার সৌন্দর্য্য। আজ আমি যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগ ছাড়া আরো অনেক কিছু জানলেও, হিসেবে পটু হলেও তার কাছে বেতের বাড়ি খেতে হবে নিশ্চিত। এবং তাই হয়!
সপাং!
-এসব কি করেছিস? হয়েছে কিছু? আমি এগুলো শিখিয়েছিলাম? সবই তো ভুলে বসে আছিস অপদার্থ কোথাকার!
আমি শারিরীক ব্যথা এবং তিরস্কার এতটা উপভোগ করিনি কখনও।
-দেখি তোকে তোর নতুন মাস্টার কি অংক কতে দিয়েছে!
চোখে চশমাটা সেঁটে নিয়ে গলার স্বরটা এক স্কেল নামিয়ে তিনি গম্ভীর হন।
আমার ল্যাপটপটা, যাকে আমি ঢাউস ক্যালকুলেটর বলে থাকি, কাছে নিয়ে তিনি ঘাটাঘাটি করতে থাকেন
এত অত্যাধুনিক গ্যাজেটের তিনি কি বুঝবেন! আমি সংশয় প্রকাশ করি।
জবাবে,
আমি শারিরীক ব্যথা এবং তিরস্কার এতটা উপভোগ করিনি কখনও।
-দেখি তোকে তোর নতুন মাস্টার কি অংক কতে দিয়েছে!
চোখে চশমাটা সেঁটে নিয়ে গলার স্বরটা এক স্কেল নামিয়ে তিনি গম্ভীর হন।
আমার ল্যাপটপটা, যাকে আমি ঢাউস ক্যালকুলেটর বলে থাকি, কাছে নিয়ে তিনি ঘাটাঘাটি করতে থাকেন
এত অত্যাধুনিক গ্যাজেটের তিনি কি বুঝবেন! আমি সংশয় প্রকাশ করি।
জবাবে,
আবারও সপাং!
-আমার চেয়ে তুই বেশি বুঝিস নাকি হারামজাদা! কি বেয়াদব! এই দেখ তোর হিসেবগুলো ঠিকভাবে করে দিয়েছি কিনা?
তিনি রোষ,তৃপ্তি এবং স্নেহের মিশ্রণে এক অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকান আমার দিকে।
-আরে, সব দেখি খাপে খাপ মিলে গেছে! থ্যাংকু স্যার!
-খাপে খাপ আবার কি ধরনের শব্দ! বেয়াদব!
তিনি আরেকবার সপাং দিতে গিয়ে থেমে যান
-কি হয়েছে তোর? মুখ এরকম কুঁচকিয়ে আছিস কেন?
-পেটে ব্যথা স্যার! আলসার! গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খেতে হবে।
-যত্তসব! তোদের বয়সে আমাদের এসব কিছুই ছিলোনা। পড়াশোনা, স্বাস্থ্য কোনটাই ঠিক রাখতে পারলিনা!
তিনি গজগজ করতে করতে চলে যান।
তিনি রোষ,তৃপ্তি এবং স্নেহের মিশ্রণে এক অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকান আমার দিকে।
-আরে, সব দেখি খাপে খাপ মিলে গেছে! থ্যাংকু স্যার!
-খাপে খাপ আবার কি ধরনের শব্দ! বেয়াদব!
তিনি আরেকবার সপাং দিতে গিয়ে থেমে যান
-কি হয়েছে তোর? মুখ এরকম কুঁচকিয়ে আছিস কেন?
-পেটে ব্যথা স্যার! আলসার! গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খেতে হবে।
-যত্তসব! তোদের বয়সে আমাদের এসব কিছুই ছিলোনা। পড়াশোনা, স্বাস্থ্য কোনটাই ঠিক রাখতে পারলিনা!
তিনি গজগজ করতে করতে চলে যান।
অফিস থেকে বের হবার সময় এখন। আমিও বেড়ুই। আলসারের ওষুধ কিনতে হবে। ফার্মেসির সামনে গেলে আবারও এক পুরোনো মুখের দেখা পেয়ে যাই।
মুখ নয় ঠিক, বৃক্ষ। একটা নিমগাছ। আমাদের বাসার পাশে ছিলো সবুজ, সুন্দর সতেজ একটা নিমগাছ। ঐ গাছটার নীচে বসে কত সময় কাটিয়েছি! নিমগাছের হাওয়া খুব স্বাস্থ্যকর। ক্লান্ত আমি ফার্মেসিতক না গিয়ে গাছের নীচে বসে পড়ি। হাওয়া বইছে হাওয়া! কত আদরের হাওয়া! যেন জড়িয়ে ধরেছে আমায় আষ্টেপৃষ্ঠে, যেন কত অনুযোগ তার পাতায়, যেমন থাকে মানুষের চোখের পাতায়, কেন এত অনিয়ম করে নিজেকে ধ্বংস করছি!
অনেক কথা
একটি গাছ।।
অনেক ব্যথা
একটি গাছ।।
একটা সময়ের চিন্হ
দাগ কাটে, হৃদয় গভীরে
একটি গাছ ; অনুভুতি ভিন্ন।
একটি গাছ।।
অনেক ব্যথা
একটি গাছ।।
একটা সময়ের চিন্হ
দাগ কাটে, হৃদয় গভীরে
একটি গাছ ; অনুভুতি ভিন্ন।
তার সবুজ আমি আঁকড়ে ধরে থাকি। তার হাওয়ায় আমার ফুসফুসে সাইক্লোন বয়ে চলে। আমি সতেজ হয়ে উঠি। বাসার দিকে রওনা দিই।
*
-কোথায় যাচ্ছো?
কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে ব্যতিব্যস্ত হয়ে তালা লাগিয়ে বাসা থেকে বেড়ুবার মুহুর্তে তাকে আমি জিজ্ঞেস করি।
- চলে যাচ্ছি। আমি কি সারাজীবন থাকবো নাকি?
-আরো কিছুক্ষণ থাকা যায়না?
-না! নিয়ম নেই। তবে তোমার এ্যালার্ম ঘড়ি, এ্যান্টাসিড, ফেনোবার, টোস্টার, সেলফোন সব তো থাকছেই! এসব দিয়েই তো এতদিন চালিয়েছো।
-কিন্তু এভাবে তো চলেনা!
গুঙিয়ে উঠে বলি আমি।
-খুব চলবে। আর যদি একান্তই না চলে তবে,
-কোথায় যাচ্ছো?
কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে ব্যতিব্যস্ত হয়ে তালা লাগিয়ে বাসা থেকে বেড়ুবার মুহুর্তে তাকে আমি জিজ্ঞেস করি।
- চলে যাচ্ছি। আমি কি সারাজীবন থাকবো নাকি?
-আরো কিছুক্ষণ থাকা যায়না?
-না! নিয়ম নেই। তবে তোমার এ্যালার্ম ঘড়ি, এ্যান্টাসিড, ফেনোবার, টোস্টার, সেলফোন সব তো থাকছেই! এসব দিয়েই তো এতদিন চালিয়েছো।
-কিন্তু এভাবে তো চলেনা!
গুঙিয়ে উঠে বলি আমি।
-খুব চলবে। আর যদি একান্তই না চলে তবে,
সে তালা লাগানো শেষ করে বলে,
-এই নাও চাবিটা। এটা রাখো। হারিয়ে ফেলোনা যেন! টাটা!
আমি চাবিটা পকেটে রাখি। পকেটটা যে কখন ছিড়ে গিয়েছিলো বুঝিইনি! পকেটের ফাঁক গলে পড়ে যায় ওটা। আমি ওটা খুঁজতে থাকি পাগলের মত।
-এই নাও চাবিটা। এটা রাখো। হারিয়ে ফেলোনা যেন! টাটা!
আমি চাবিটা পকেটে রাখি। পকেটটা যে কখন ছিড়ে গিয়েছিলো বুঝিইনি! পকেটের ফাঁক গলে পড়ে যায় ওটা। আমি ওটা খুঁজতে থাকি পাগলের মত।
প্রাক্তন প্রেমিকা-ভালোবাসা, প্রথম শিক্ষাগুরু-নৈতিকতা, হাত ধরে থাকে , তারা চলে যায় দূরে। ঐ নিমগাছটার সুশীতল ছায়ার কাছে।
চাবিটা নিশ্চয়ই আমি খুঁজে পাব একদিন! সেদিন, যাবতীয় যন্ত্র এবং রাসায়নিক প্রস্তুতকারী কারখানার শরণাপন্ন হতে হবেনা আর, আমি কর্কশ সাইরেন উপেক্ষা করে পাখির ডাকে খুঁজে নেব চেনা মুখ, চেনা সবুজ ...
চেনা হাওয়ায় উড়াব চুল।
সবসময় না হলেও কখনও কখনও নিশ্চয়ই পারবো...
Comments
Post a Comment