অপ্রতিসম

ওরা না আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। না হয় আমি ছিলাম ওদের অবজ্ঞার যোগ্য, না হয় আমি ছিলাম অনাদরে পড়ে থাকা পাপোষের মত পিষ্ট, তারপরেও আমাকে এভাবে ফেলে রেখে চলে যাবে? ওরা চলে গেলো বসন্ত উৎসবে আর আমি শীতে জীর্ণ ঝরাপাতার মত পড়ে রইলাম বিষাদনগরে। ওরা সমুদ্রতীরে গিয়ে শঙ্খের হাহাকার শুনে অনুরনিত হবে, ওরা সূর্য্যঅঞ্চলে গিয়ে প্রাণ ভরে বিশুদ্ধ হাওয়া টেনে নেবে ফুসফুসের ভেতর, আর রোদের রোজনামচা জেনে তার সাথে উষ্ণ সখ্যতা গড়বে। ওরা এমনই। ফূর্তিবাজ। জীবনটাকে যেন একটা তাওয়ায় বসিয়ে নেড়েচেড়ে দেখছে। জীবন, তুমি সুন্দর। জীবন, তুমি প্রাচুর্যে ভরা। জীবন, তোমার দম অফুরন্ত। ওরা এমনিভাবে জীবনকে পরিচালিত করতে পারে। ওরা যেন নরম মাটি দিয়ে কাজ করা কুমারের দল। জীবনটা নরম মাটি আর ওরা এই মাটিকে নিপুন দক্ষতায় নিজেদের ইচ্ছেমত আকার দিচ্ছে। আমি অবাক বিস্ময়ে দেখতাম ওদের। কীভাবে পেলো তারা এমন ঈশ্বরপ্রদত্ত ঐশ্বর্য! আমার একটুও হিংসা হতো না দেখে। তাদের সাথে আছি, হঠাৎ করে তাদের কারো স্পর্শ পাচ্ছি, তাদের সপ্তসুরে আমোদিত মেলোডিয়াস কথাবার্তা শুনছি এই আনন্দেই মাতোয়ারা হয়ে থাকতাম আমি। সন্ধ্যে হলে ওরা যেতো জোনাকের আবাসনে। হাজার হাজার জোনাকি ওদের গায়ে এসে বসতো, চারিধারে ঘিরে ধরতো, মাথায় বসতো মুকুট হয়ে। এমন সুন্দর আলোর মুকুট কে দেখেছে কবে? আমি দেখেছি, আমি দেখেছি! আমি আরো দেখেছি বর্ষাকালে তুমুল বৃষ্টির মধ্যে ওদের অবগাহন। পানির ফোঁটা নয়, যেন ঈশ্বরকণা ঝলকে উঠতো ওদের শরীরে। ওরা আরো উজ্জল হতো, সুন্দর হতো। অপরাজেয় মনে হতো ওদের। অবশ্য প্রতিপক্ষ থাকলে তবেই না জয় পরাজয়ের ব্যাপার আসে। তাদের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী থাকলে তবেই না অপরাজেয় বলা যেতো! তাদের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলো না। কেউ তাদেরকে ঘাঁটাতে সাহস পেতো না। কারণ তারা জানে প্রাণোল্লাসে ভরপুর এই দলটির স্ফূর্তি নিমিষেই সহিংসতায় পরিবর্তিত হতে পারে। আর তা যদি হতো রক্তের ফোয়ারা ছুটতো, মাংসের পাহাড় জমতো, সবাই ঝাড়েবংশে বিনাশ হয়ে যেতো। কাদের এত সাহস তাদের সাথে লাগতে যাবে? তাদের দৈহিক গড়ন ছিলো একইসাথে সুন্দর এবং ভয়াল। তারা পরতো লম্বা ঝুল দেয়া জামা যা তাদের উচ্চদৈর্ঘ্যকে আরো বিকশিত করতো। মেদহীন পেটা শরীর আভিজাত্যের সূচক হয়ে থাকতো। আমি শুধু দেখতাম, মন-প্রাণ-চোখ ভরে দেখতাম। আমার এই কাঙালপনায় তাদের প্রচ্ছন্ন স্নেহের ইঙ্গিত পাওয়া যেতো। আমার মন ভরে যেতো এই দয়ার্দ্র আচরণে।
ওরা ছিলো আমার হিরো। সিনেমাতে সুপারহিরোদের দেখা মেলে। দর্শকরা উল্লসিত হয় এসব অতিমানবীয় কর্মকাণ্ড দেখে। তারা পয়সা খরচ করে টিকেট কিনে পপকর্ন আর কোমল পানীয় নিয়ে এসব দেখে কল্পনারাজ্যে বিচরণ করতো। আমার এসবের দরকার ছিলো না। আমি ঘরের এক কোণে গুটিশুটি মেরে পড়ে থাকতাম আর বিনা খরচে তাদের যাবতীয় অতিমানবীয় কার্যক্রম দেখতাম। ওরা সিনেমার চেয়ে অনেক বেশি ভালো। সিনেমায় তো যা দেখানো হয় ওগুলো সব মিছেমিছি, কিন্তু আমার সুপারহিরোরা ছিলো সত্যিকারের। ওরা অবশ্য পাতাল ফুঁড়ে বের হওয়া অথবা আকাশে দাপিয়ে বেড়ানোর মতো উদ্ভট কাজ করতে পারতো না, কিন্তু ওরা যা করতো তার সবই আমার কাছে ছিলো অনন্য এবং অসাধারণ। অন্তত আমি যে অবস্থায় আছি, বা আমার ক্ষমতা যতটুকু তার হিসেব করলে ওদের দৈনন্দিন কাজগুলো তুলনামূলক বিচারে অতিমানবীয় বলাই যেতে পারে আমার সাপেক্ষে। ওরা দৌড়োতো, ওরা খেলতো, ওরা সাঁতার কাটতো, আর আমি স্বপ্নালু চোখে মোহাবিষ্ট হয়ে ওসব দেখতাম।
কেন যে ওরা চলে গেলো! আমাকে বলেছিলো ওরা একটু বাইরে যাবে আর আসবে। কিছুক্ষণের জন্যে। আমি এই স্যাঁতস্যাঁতে শ্যাওলাঘরে বসে অপেক্ষা করছিলাম, কখন ওরা আসবে। ঘড়ির কাঁটাটা এত আস্তে চলছে কেন! সেকেন্ড পেরিয়ে মিনিট, মিনিট পেরিয়ে ঘন্টা- কিন্তু ওদের তো আসার কোনো চিহ্নই নেই! তবে কি ওরা আমাকে ছেড়ে চলে গেলো? আমি সবসময় এই আশঙ্কাই করে এসেছি। আমার ভয়ঙ্করতম দুঃস্বপ্ন ছিলো ওদের এই চলে যাওয়াটা। চলে গিয়ে আর কতদিন থাকবে! ওদের হয়তো আমাকে কোনো কাজেই দরকার নেই, তারপরেও আশান্বিত হই আমি পূর্বে আমার সাথে ওদের করা দয়ালু আচরণের কথা ভেবে। আমি বাইরে যেতে পছন্দ করতাম না, একা একা যাবার তো প্রশ্নই ওঠে না। সেই সামর্থ্যই ছিলো না আমার। ওরা আমার গাল টিপে আদর করতো। এতে আমি স্নেহাপ্লুত হয়ে প্রায় নুয়ে যেতাম। ওরা আমার চুলে বিলি কাটতো, আমার জন্যে রঙচঙা কাপড় দিয়ে পোষাক বানিয়ে দিতো। যদিও আমাকে থাকতে হতো বাড়ীর একদম কোণায়, ছোট্ট একটা ঘরে, যদিও ওরা আমাকে অন্যদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে অস্বস্তি বোধ করতো, তারপরেও ওদের ওপর কখনও রাগ করি নি আমি। আমার মতো অকেজো, অথর্ব, অকর্মণ্য একজনকে ওরা যে স্নেহ দিয়ে আগলে রেখেছিলো সেটাই অনেক।
কেন যে চলে গেলো ওরা! এই ঘরটায় থাকতে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। ওরা কি বুঝতে পারছে না এই জানালাহীন ঘুপচি ঘরে আঁধার ওৎ পেতে আছে আমায় ভয় দেখাবে বলে? ওরা কি জানে না আমি একা একা থাকতে ভয় পাই? এ সমস্তকিছুই তো ওরা জানে। তাহলে কেন চলে গেলো? আর কি ফিরে আসবে না? এমনতর ভয়ঙ্কর সম্ভাবনার কথা ভাবতেই আমার গা কাঁটা দিয়ে ওঠে। ফিরে এসো, ফিরে এসো দেবদূতেরা! তোমাদের মখমলপেলব পোষাকে জোনাকির মুকুট পরে ময়ুরীঝুনঝুনি বাজিয়ে ফিরে এসো। তোমাদের বসন্ত উৎসব, অথবা বর্ষাবিলাস, কিংবা জোছনায় অবগাহন, ওসব কিছু আমি চাই না। ওসব তোমাদের জন্যে। পৃথিবী কেঁপে উঠুক তোমাদের আশ্চর্য উল্লাসে, তোমাদের হৃৎকম্পনে প্রোথিত হোক চড়ুইপাখির চঞ্চলতা। তোমরা কি অনেক দূরে চলে গেছো? তোমরা কি পৃথিবীর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত মায়াবনে গিয়ে নৃত্যগীতরত পরী আর দেবতাদের সাথে তাল মিলাচ্ছো? আমি অতদূর যেতে চাই না। আমার শরীরে কুলোবে না। দুঃখ একটাই, আমি তোমাদের এই আনন্দ উদযাপন দেখতে পারছি না। তোমাদের আনন্দময় কর্মকাণ্ড অবলোকন করা আমার বেঁচে থাকার প্রেরণা, এটা কি জানো? আমি অপেক্ষা করবো, এই স্যাঁতস্যাঁতে ঘুপচি ঘরটার জানালা ঢেকে গেছে বিশাল এক ইমারতের বাধায়। এখানে আলো আসে না, বাতাস আসে না, শুধু একাকী বসে থেকে তোমাদের আগমনের প্রহর গোনা; এই তো আমার বেঁচে থাকার অবলম্বন।
ওরা আসছে না। ওরা তাহলে চলেই গেলো? আমাকে আর নিতে আসবে না? আমি আর ওদের আনন্দ উদযাপন দেখতে পাবো না? জীবন যতই কঠিন হোক, মানুষকে মানিয়ে নিতে হয় একটা সময়। এই ছোট্ট আমি, আর কত যুঝবো বলো? আমি শেষতক ঠাঁই দিলাম তোমাদেরকে আমার কল্পনার জগতে। একা একা বসে থেকে তোমাদের নিয়ে ভাবি আমি। সেই সাথে নিজের দিকেও এক ঝলক চোখ বুলিয়ে নেই। আমি কদাকার, আমি খর্বকায়, আমি কালো; তোমাদের ঠিক বিপরীত। ঈশ্বরের অদ্ভুত খেয়ালীপনায় আমি শুধু বিকৃত, কুৎসিত চেহারা নিয়ে আসি নি আরো অনেক প্রতিবন্ধকতায় সংকীর্ণ আমার জীবন, চলন। ঈশ্বরের প্রতিও আমার রাগ নেই। আমি আসলে রাগ করতেই পারি না। রাগ করতে যে সাহস, মনের জোর লাগে সেটা আমার নেই। রাগ করতে গেলে আমার হৃৎপিণ্ডটা সজোরে ঘাঁই মারতে থাকে বুকের ভেতর। চিনচিনে একটা ব্যথা ছড়িয়ে পড়ে বুক জুড়ে। তাছাড়া আমার মতো একজন ঊনমানুষের কি রাগ করা শোভা পায়?
অনেক কষ্টে আমার শরীরটাকে টেনে হিঁচড়ে হামাগুড়ি দিয়ে জানালার কাছে যাই। একটা ভূমিকম্প হয়ে বিল্ডিংটা ভেঙে গেলে কেমন হতো? আমি প্রাণভরে আকাশ দেখতে পারতাম। এখানকার খাবারটাও খুব বিচ্ছিরি। নুন-ঝাল-তেল ছাড়া বিস্বাদ উৎকট চেহারার স্যুপ। আর কতই বা ভালো লাগে খেতে? এখানকার মানুষগুলো খুব নিষ্ঠুর। কোন একটা কাজ ঠিকমত না করতে পারলেই বকুনি। এই যেমন, এখন স্যুপটা খেয়ে শেষ করে ঢেকে রাখতে হবে। কিন্তু আমার ইচ্ছে করছে না একদম। আবার অত দূর যাওয়া হাঁচড়ে পাঁচড়ে, দম ফুরিয়ে যাবে।
এ জায়গাটাকে আমি প্রথমে ভেবেছিলাম হাসপাতাল। আমার মন খুশি খুশি হয়ে উঠেছিলো। আমি কি তবে এবার সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরবো? ওরা আমার জন্যে এমন আয়োজন করছে ভেবে গর্বে আর পুলকে আমার মাথাটা ঘুরে উঠলো যেন! কিন্তু যতই সময় যেতে লাগলো, আমি বুঝতে পারলাম এটা হাসপাতাল না। এখানে সাদা ধবধবে চাদর আর বালিসে আরামে শুয়ে থাকা যায় না। খটখটে একটা চৌকিতে করেই দিনযাপন। এখানে শুশ্রী চেহারার নার্সরা এসে প্রেসার মাপে না, পাহাড়ের মত বিশাল একটা লোক এসে কঠোর মুখে খাবার দিয়ে যায়। তার সাথে কথা বলতে গিয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়ে ভীষণ অপমানিত হয়েছি। ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম, এটা একটা অনাথ আশ্রম। এখানে পরিবারের বোঝা হয়ে আছে যারা তাদেরকে রেখে চলে যায় "দেবদূতেরা"। এখানে কেউ কারো সাথে দেখা করতে আসে না। এলেও খুব বেশিক্ষণ থাকে না। আমাকে এভাবে এখানে ফেলে রাখার জন্যে আমি "দেবদূতদের" প্রতি রাগ করি নি মোটেও। বলেছি না, রাগ করাটা আমার ধাঁতেই নেই। ঠিকই তো, আমি পরিবারের জন্যে বিশাল এক বোঝা হয়েই ছিলাম। বাবা রিটায়ার্ড করেছেন, বড়ভাইয়া ব্যবসায় লোকসানের সম্মুখীন হয়েছেন, এমতাবস্থায় আমার মত একজনের জন্যে বাড়তি খরচ করাটা মোটেও সমিচীন নয়। আমার ঘরটাকে ঠিকঠাক করে কাকে যেন সাবলেট দেয়া হবে এমন কথাও আমি শুনেছি। এখানে চলে এসে পরিবারের জন্যে বাড়তি উপার্জনের পথ করে দিয়েছি, ভাবতেই আমার গর্ব হয়। অবশেষে আমি পরিবারের জন্যে কিছু একটা করতে পারলাম! এখন শুধু কেউ যদি একটু দেখা করতে আসে, তাহলেই আমার এখানে থাকাটা আনন্দময় হয়। কিন্তু কেউ আসে না। অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে আমি একটা চিঠি লিখতে বসি পরিবারের সবার কাছে,
প্রিয় বাবা-আপু-ভাইয়া,
আমি জানি তোমরা আমাকে নিয়ে খুব অস্বস্তি বোধ করতে। তারপরেও তোমরা আমাকে দীর্ঘ ষোলটা বছর লালন পালন করেছো এজন্যে আমি কৃতজ্ঞ। এখন যে জায়গাটাতে তোমরা আমাকে এনে রেখেছো, সেটা মোটেও ভালো নয়। আলো-বাতাস নেই, ছাঁরপোকা আর মশাদের অত্যাচার, প্রাণ ওষ্ঠাগত। না না, ভেবো না আমি তোমাদের কাছে নালিশ করছি, তোমরা আমার এবং পরিবারের ভালোর জন্যে যা হবে তাই করেছো। অবশ্য মা বেঁচে থাকলে কি এটা করতে দিতেন? জানি না। যাকে কখনও দেখি নি, তার সম্পর্কে কিছু না বলাই শ্রেয়।
তোমরা কি জানো, তোমাদের এতটুকু স্নেহ, ভালোবাসার জন্যে আমি কতটা প্রতীক্ষা করে থাকতাম? তোমাদেরকে আমি সুপারহিরো ভাবতাম। তোমাদেরকে আমি দেবদূত ভাবতাম। আমাকে বাসায় বন্দী করে রেখে যখন তোমরা কোন পার্টিতে বা সিনেমা দেখতে যেতে, সেই সময়টায় আমি তোমাদেরকে কল্পনা করতাম এভাবে, যেন তোমরা চলে গেছো নক্ষত্রবাগিচায়, আকাশের শেষ স্তরে, সূর্য যেখানে আলপনা এঁকে দিতো তোমাদের চোখেমুখে। তোমরা যখন দলবেঁধে আউটিংয়ে যেতে, আমি কল্পনা করতাম মেঘের দালানকোঠায় তোমরা শুয়ে-বসে-গা এলিয়ে দিয়ে সেতার বাজাচ্ছো। তোমাদেরকে কোনো মালিন্য, কোনো কপটতা গ্রাস করবে তা আমি ভাবতেই পারতাম না। দেবদূতেরা এসবকিছুই জয় করে মেঘ থেকে সূর্য থেকে মহাবিশ্বে ঘুরে বেড়ায়। শুনলে হয়তো তোমাদের হাসি পাবে, কিন্তু বিশ্বাস করো আমি এটাই আমার জীবনের অবলম্বন ভেবে বাঁচতে চেয়েছিলাম। বড় আপা যখন মুখ ঝামটা দিয়ে বলতো "এ মরে না কেনো!" আমি দুঃখ পেতাম না, কারণ মাঝে মধ্যে সে আমাকে আদরও করতো, অবশ্য সেটা বাড়িতে থাকা হুলোবিড়ালটাকে করা আদরের চেয়ে কমই ছিলো, যাকগে, অতকিছু ভেবে কী হবে! বড় ভাইয়া যখন ধমক দিতো অকারণেই তখনও আমি মন খারাপ করতাম না। দেবদূতদের ওপর কি রাগ করা যায়! বাবা, তুমি বরাবরই আড়ালে থেকেছো। তারপরেও তুমি যখন ভাই-বোনদের কাছে আমার কথা জিজ্ঞেস করতে তখন আমি আনন্দে আপ্লুত হতাম। আর মা... এই চিঠিটা হয়তো লেখারই দরকার হতো না যদি মা বেঁচে থাকতো! আমি আমার বিকৃত হাত, অপ্রতিসম পা দিয়ে হামাগুড়ি দিতে দিতে ঠিকই তার কাছে পৌঁছে যেতাম। তার বুকের মাঝে মুখটা গুঁজে দিয়ে যাবতীয় নালিশ জানাতাম। মা নিশ্চয়ই আমাকে আদর করে জড়িয়ে ধরে রাখতো, তার কাছ থেকে কোথাও যেতে দিতো না। এর বেশি কিছু চাওয়ার ছিলো না এই জীবনে। দেবদূতদের সাথে কি আর ঊণমানুষদের তুলনা চলে? আর লিখতে পারছি না। হাঁপিয়ে উঠছি। অনেক কসরৎ করতে হয়েছে এতদূর লিখতে। তোমরা ভালো থেকো...
মনে মনে এতদূর লিখে ফেলেছিলাম। সম্বিৎ ফিরে পেলাম খাবার দিতে আসা লোকটার কর্কশ আওয়াজে। লোকটাকে খাতা আর কলম দিতে বলেছিলাম চিঠি লেখার জন্যে। এনেছে কি?
আমাকে অবাক করে দিয়ে সে সত্যিই কাগজ আর কলম নিয়ে এসেছে। মুখে মৃদু হাসি। মন ভালো হয়ে গেলো আমার। বেঁচে থাকার আকূল অন্বেষণে এই লোকটাকে দেবদূত হিসেবে আখ্যায়িত করতে আর দ্বিতীয়বার ভাবতে হলো না আমার।
x

Comments

Popular posts from this blog

প্যাথেটিক হোমিওপ্যাথি, কেন বিশ্বাস রাখছেন!

মৃতবৎসা জোছনার কাল

তোমার জন্যে শুভ্র গোলাপ, বেড়ালতমা -হামিম কামাল