ইলুমিনাতি, একটি মার্কেটিং টুল; অথবা ছহি ইলুমিনাতি শিক্ষা




ছোটবেলায় আমি বেশ ভীতু প্রকৃতির ছিলাম। জ্বীন-ভূত, ড্রাকুলা, ইত্যাদির ভয়ে অস্থির থাকতাম। কখনও শুনতাম রক্তচোষা এসে বাচ্চাদের গলা থেকে রক্ত শুষে নিয়ে যাচ্ছে, কখনও শুনতাম, ব্রিজ বানানোর জন্যে বাচ্চাদের মাথা কেটে নেয়া হচ্ছে, ইত্যাদি। ধীরে ধীরে বড় হই, জ্ঞানবুদ্ধি বৃদ্ধি পায়, এখন আমার বাচ্চাদের এসব নিয়ে ভয় পাওয়ার বয়স নেই। কিন্তু এই সময়ে নতুন এক আতঙ্ক পেয়ে বসলো। না, আমার ভেতর না, আমার আশেপাশের অনেককেই বৃদ্ধকালের রূপকথায় মজে থেকে ঋদ্ধ হতে দেখেছি। ইলুমিনাতির কথা বলছিলাম আর কী। এমন এক গুপ্ত সংগঠন, যার কার্যপ্রণালী সম্পর্কে সবাই জেনে বসে আছে। বিভিন্ন আর্টিকেল এবং বই লেখা হচ্ছে! যারা ইলুমিনাতি সম্পর্কে কিছুই জানেন না, তাদের জন্যে অতি সংক্ষেপে জানিয়ে রাখি। বলা হয়ে থাকে- ইলুমিনাতি একটি গুপ্তগোষ্ঠী, তারা পৃথিবীর যাবতীয় অপকর্মের জন্যে দায়ী। বিভিন্ন যুদ্ধবিগ্রহও তাদের ষড়যন্ত্রে সংগঠিত হচ্ছে, তারা শয়তানের উপাসনা করে, এবং শয়তানের থেকে শক্তি এবং জ্ঞান নিয়ে নেয়। তারা নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডারের জন্যে কাজ করে যাচ্ছে। পুরো পৃথিবীকে একটি একটি সরকারের অধীনে, একটি দেশে পরিণত করতে পারলে তারা নিজেদের সার্থক মনে করবে। আমি এসব কথা শুনে এসেছি অনেক, শুনে বেশ শিহরিতও হয়েছি। কিন্তু হঠাৎ করে একদিন এক দুপুরবেলা আমাকে ভুতে ঠেলা মারলো। বললো, ইলুমিনাতি যদি এতই গুপ্ত আর এতই শক্তিশালী হয়, তাহলে এর সম্পর্কে সব তথ্য মানুষ কীভাবে কানে? কার মাধ্যমে জানে? ইলুমিনাতির সদস্যরা আর্টিকেল অথবা বই লেখকদের এস এম এস করে? নাকি ভাইবার অথবা মেসেঞ্জারের মাধ্যমে বার্তা আদানপ্রদান হয়? আমার আশেপাশের সবাই মোটামুটি নিশ্চিত ইলুমিনাতির উপস্থিতি সম্পর্কে। এখন আমাকে যেটা করতে হবে, তা হলো আরেকটু গভীরে যেতে হবে। চলেন যাই!

ইলুমিনাতি সম্পর্কে জ্ঞান কারা দেয়?

বাংলাদেশে যারা ইলুমিনাতি নিয়ে অবসেসড, তাদের একটা বড় অংশের জানার সূত্র ইউটিউবের ভিডিও। আরেকটু অনুসন্ধিৎসু যারা, তারা কিছু আর্টিকেল পড়েছেন। আর যারা জ্ঞানী, তারা ইংরেজি বই পড়েছেন। তো, আমিও ভিডিও, আর্টিকেল, ইংরেজি বই সবই দেখলাম, পড়লাম, অবশেষে একটা সিদ্ধান্তে আসলাম। কী সেই সিদ্ধান্ত সেটা পড়তে পড়তেই জানতে পারবেন। তার আগে আসুন, ইলুমিনাতি বিষয়ক বহুল প্রচলিত এবং রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহৃত দুটি বই নিয়ে কথা বলা যাক। এসব বই থেকেই আপনারা ইলুমিনাতি সম্পর্কে জানবেন, এবং মানুষকে জানাবেন। একটি হলো “Bloodlines of Illuminate” , লেখক-ফ্রিৎজ স্প্রিংমায়ার। আরেকটি বাংলা বই- ‘ইলুমিনাতি’, লেখক মো আদনান আরিফ সালিম। ইংরেজি বইটিতে বলা হয়েছে ১৩টি পরিবারের কথা, যারা নাকি সবাই ইলুমিনাতির হর্তাকর্তা, সাথে উপজাত হিসেবে নানারকম ষড়যন্ত্র তত্ত্ব এসেছে, এবং কীভাবে তারা পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণ করছে তা বর্ণিত আছে। বাংলা বইটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, লেখক এখানে ইলুমিনাতি প্রায় শ খানেক বই এবং আর্টিকেল পড়ে সেটির সারকথা তুলে ধরেছেন, ফলে আমার জন্যে কাজটা সহজ হয়েছে। তো চলুন দেখা যাক, কী বলেছেন লেখকদ্বয়। আমি নির্বাচিত কিছু মনিমাণিক্য তুলে ধরবো।

ফ্রিৎজ স্প্রিংমায়ার সম্পর্কে বলে নেয়া যাক একটু। ভদ্রলোক একজন ডানপন্থী চিন্তাভাবনার অতি ধর্মপ্রাণ খ্রিস্টান। খ্রিস্টান ধর্মের ভবিষ্যত, এবং একে নিয়ে সংগঠিত বিভিন্ন ষড়যন্ত্র নিয়ে তার চিন্তার শেষ নেই। তবে তিনি নিজে খ্রিস্টান ধর্মের ওপর কতটা শ্রদ্ধাশীল সে প্রশ্ন থেকে যায়। ভদ্রলোকের দুটি বিয়ে করেছেন। সেটা সমস্যা না। সমস্যা হলো, প্রথম বিয়ের সময় তিনি অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। পরবর্তীতে তিনি ব্যাংক ডাকাতির দায়ে জেলও খাটেন। থাক, আর নিন্দামন্দ না করি। বই নিয়ে বলি। তিনি তার বইয়ে ১৩টি ক্ষমতাশালী পরিবারের নাম বলেছেন। তারা হলেন- এ্যাস্টর, বান্ডি, কলিন্স, ডুপন্ট, ফ্রিম্যান, কেনেডি, লি, ওনাসিস, রেনল্ড, রকফেলার, রথচাইল্ড, রাসেল এবং ভ্যান ডিউন। তারা কীভাবে একে অপরের সাথে কানেক্টেড, তার ব্যাখ্যা অবশ্য খুবই কম। তবে যেহেতু পৃথিবীটা ছোট হয়ে আসছে, এবং একে অপরের সাথে দেখা হয়ে যাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার, তাই এমন কোন উপলক্ষ্য পেলে তাকে বেশ উত্তেজিত হতে দেখা গেছে। যেমন, ডিজনির পঞ্চাশ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে বিল ক্লিনটন, রকফেলার পরিবারের বিভিন্ন সদস্য আরো অনেকেই (তথাকথিত ইলুমিনাতি), এই হলো অকাট্য প্রমাণ! প্রতিটি পরিবার সম্পর্কে বলার সময় তিনি তাদের বিভিন্ন সদস্য,তাদের সাথে সংযোগ আছে এমন অনেককে ইলুমিনাতি হিসেবে অবিহিত করেছেন, কিন্তু কীভাবে প্রমাণ পেলেন তার ব্যাখ্যা নেই। যা দুয়েকটা আছে, দিতে আমার নিজেরই লজ্জা লাগছে। আপনারা, যারা ইলুমিনাতিতে বিশ্বাস করেন, তাদের বুদ্ধিমত্তা প্রশ্নবিদ্ধ হবে এতে।

ফ্রিম্যান পরিবারের ইলুমিনাতি সংশ্লিষ্টতা প্রসঙ্গে তিনি চলে গেছেন ইংল্যান্ডে মার্লবোরোতে। সেখানে নাকি সেই পরিবারের এক মহিলাকে রাতের বেলা একটি ইউ এফ ও অবতরণ কেন্দ্রে দেখা গেছে। ইলুমিনাতি ছাড়া কার আর এত সাহস আছে রাতের বেলা ইউএফও নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর? এতেই কি তার ইলুমিনাতি সংসর্গ প্রমাণ হয় না? কী, কথা কন না কেন?

ডিজনি ফ্যামিলির ইলুমিনাতি সংশ্লিষ্টতা প্রসঙ্গে তিনি উদাহরণ টেনেছেন তাদের প্রোডাকশনের Alive সিনেমাটির। কারণ কী? কারণ সিনেমাটির ট্যাগলাইন হলো “ Triumph of the human spirit”, অথচ সেখানে নরমাংস ভোজন আছে। কী অকাট্য প্রমাণ! এই ভদ্রলোক সিনেমাটি তো দেখেনই নি, কিসের প্রেক্ষিতে নির্মিত তাও জানেন না। সিনেমাটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। উরুগুয়ের রাগবি দল একটি প্লেন ক্র্যাশে আন্দেজ পর্বতমালায় বন্দি হয়ে ছিলো অনেকদিন। সেখানে তারা বাধ্য হয় বেঁচে থাকার জন্যে মৃত সঙ্গীদের মাংস খেতে। তবে সিনেমাটিতে মাংস খাওয়া মূল উপজীব্য বিষয় না। এত প্রতিকূল পরিবেশেও কীভাবে তারা একে অপরকে সাহায্য করলো বেঁচে থাকতে, এবং অবশেষে সবার চেষ্টায় উদ্ধার পেলো এই ভয়ানক পরিস্থিতি থেকে, তার নাটকীয় এবং আবেগঘন দৃশ্যায়ন আছে সেখানে। অথচ স্প্রিংমায়ার সাহেব কী বলছেন? “Movie after movie has cleverly brought the occult into the warp & woof of American thought, all under the disguise of entertainment. For instance, it was Disney that brought us cannibalism and told us that it was a "triumph of the human spirit" (a direct quote from Disney’s Touchtone Producer Robert Watts concerning Disney’s movie "Alive" featuring survivors of an airplane crash who turned to cannibalism).
(অফটপিক- সেবা থেকে প্রকাশিত আন্দেজের বন্দি পড়ে দেখতে পারেন, এই ঘটনা নিয়ে লেখা একটি বিখ্যাত বইয়ের অনুবাদ)।

ভারতীয় রাজনীতিবিদ ইকবাল আলি শাহকে ইলুমিনাতি বলার পেছনে তার যুক্তি হলো- তিনি যাদুবিদ্যা নিয়ে অনেকগুলি বই লিখেছেন। যাদুবিদ্যা নিয়ে বই লিখলেই যদি ইলুমিনাতি হয়ে যায়, তাহলে আমাদের দেশের পথেঘাটে, লঞ্চে-ফেরিতে যেসব বশীকরণ এবং তন্ত্র মন্ত্রের বই পাওয়া যায়, তার লেখকেরা কী? তাদেরকে বাদ রাখা হলো কেন? আপনি বিশ্বাস করবেন না, পুরো বইয়ে বাংলাদেশ সম্পর্কে একটা কথাও নেই! দুঃখের বিষয় না? আমরা আর কতদিক দিয়ে পিছিয়ে থাকবো?

বান্ডি ফ্যামিলির সংশ্লিষ্টতা প্রসঙ্গে তিনি সিরিয়াল কিলার টেড বান্ডির উদাহরণ দিয়েছেন। টেড বান্ডি অন্য সিরিয়াল কিলারদের মত বলে নি যে তার ব্ল্যাকআউট হয়, সে কিচ্ছু মনে রাখতে পারে না, সে বলেছে যে তাকে নাকি একটা ‘Force’ জোর করে এসব করায়। কোন ফোর্স বুঝতে পারছেন তো? আরে আপনি না বুঝলে কী হবে! লেখক ঠিকই বুঝে গিয়েছেন। এটা হলো ইলুমিনাতিদের শয়তান আরাধনার প্রতিফল। টেড বান্ডি যে ইলুমিনাতি ছিলো, তার আরো একটি প্রমাণ- সে রকফেলারের ভক্ত ছিলো। রকফেলারের রিপাবলিকান পার্টির ওয়াশিংটন শহরের এক শাখায় একটা পদও পেয়েছিলো। যেহেতু রকফেলার ইলুমিনাতি, সেহেতু টেড বান্ডিও ইলুমিনাতি। কী, এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না! নাহ, আপনাদের নিয়ে আর পারা গেলো না। অকাট্য প্রমাণ দিবো এবার।
স্প্রিংমায়ার মহাশয় যখন এই বই লিখছিলেন, তখন টেড বান্ডি নিয়ে তার একটু ঘাঁটাঘাঁটি করার প্রয়োজন দেখা দেয়। তিনি Stephen G. Michaud রচিত “Ted Bundy:
Conversations with a Killer” বইটি পোর্টল্যান্ড সেন্ট্রাল লাইব্রেরি থেকে ধার করতে গিয়ে দেখেন সেটার সব কপি চুরি হয়ে গেছে। ইলুমিনাতিরা আগে থেকে বুঝতে পেরে সরিয়ে নিয়েছে। কিন্তু সুখের বিষয় হলো, আপনি এ্যামাজন থেকে চাইলেই বইটি কিনতে পারেন। একটু সার্চ করলেই পাবেন।

চন্দ্রাভিযাত্রী মাইকেল কলিন্স ইলুমিনাতি ছিলো তার প্রমাণ শুনবেন? মাইকেল কলিন্স তার আত্মজীবনীতে বলেছেন, তিনি ছাত্র হিসেবে সুবিধার ছিলেন না, তার পরিবারেরও তাকে নিয়ে তেমন আশা ছিলো না। তো সেই দুর্বল ছাত্র কিভাবে নাসার চন্দ্র অভিযানে অংশ নেয়? শুধু অংশ নিয়েই ক্ষান্ত থাকেন নি, সেখানে গিয়ে বলেছেন, তিনি ঈশ্বরকে খুঁজে পান নি। এ থেকে লেখক নিঃসন্দেহ হয়েছেন চন্দ্রাভিযান আসলে ইলুমিনাতি গোষ্ঠীর এক শয়তানি প্রকল্প ছিলো।

ডু-পন্ট পরিবারের ইলুমিনাতি সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ চান? ১৯৯২ সালে লেখক মহোদয় একটি পত্রিকায় পড়েছিলেন তাদের নাকি গোপন কারখানা আছে, যেখানে স্পেস এভিয়েশনের জন্যে কাঁচামাল তৈরি করা হয়। আচ্ছা, ফ্যাক্টরিটা কি বন্ধ হয়ে গেছে? ৯২ সালের পর আর খোঁজখবর পাই না যে?

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের হস্তচিহ্ন নিয়ে তিনি তার ইলুমিনাতি সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে নিঃসন্দেহ হয়েছেন। এই ইমেজে-https://diaryofdaedalus.files.wordpress.com/2017/09/okay-bill-clinton.jpg ক্লিনটনের প্রদর্শিত ভঙ্গি নাকি ইলুমিনাতিদের সংকেত। ঠিক আছে, তাহলে একটু Ok sign লিখে গুগল ইমেজ সার্চ করে দেখুন! অতি সাধারণ একটি চিহ্নকে তিনি বানিয়ে দিয়েছেন ইলুমিনাতির সংকেত!

ক্লিনটন তার উদ্বোধনী ভাষণের ৬৬৬ তম শব্দ থেকে নাকি একটি বাক্য শুরু করেন, যা হলো- “it will not be easy; it will require sacrifice”, এখন ৬৬৬ হলো শয়তানের সংখ্যা। ৬৬৬ তম শব্দ থেকে এই বাক্য শুরু করে sacrifice দিয়ে শেষ করার মানে অশুভ কিছুর ইঙ্গিত করা, দারুণ ইমাজিনেশন! কিন্তু কাঠখোট্টা ডাটার কাছে অলীক ষড়যন্ত্র তত্ত্বকে আপনি পরাজিত করতে পারেন খুব সহজেই। inaugural speech of bill Clinton লিখে সার্চ দিন। যেকোন অনলাইন ওয়ার্ড কাউন্টারে পেস্ট করুন স্পিচটি। এবার একটু হিসেব করলেই পেয়ে যাবেন ৬৬৬ তম শব্দ কোথা থেকে শুরু হয়েছে। ৬৬৬ তম শব্দ থেকে কোন বাক্য শুরু হয় নি, সেটা একটি বাক্যের মাঝামাঝি অংশ “every opportunity.”, বাক্য শেষ, এবার নতুন করে বাক্য শুরু। এখন আপনি কিছু মিলাতে চাইলে মিলিয়ে ফেলুন!

ক্লিনটনের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই! তিনি নাকি Sign of Horn নামক একটি শয়তানের চিহ্ন দেখিয়েছেন তার ভাষণে। এখানে উল্লেখ্য, Sign of Horn চিহ্নটি জনপ্রিয় করেন ব্ল্যাক সাবাথের ভোকাল রনি জেমস ডিও। সেটা সত্তরের দশকের শেষের দিকের কথা। বিল ক্লিনটন সেই সময়ের রক মিউজিকের ফ্যান ছিলেন, এটাই তার দোষ!

লেখক এইচ জি ওয়েলসকেও ছাড়া হয় নি। কারণ তিনি নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার নামক একটি বই লিখেছিলেন। সেই বইয়ের উদ্দেশ্য ছিলো মহৎ। বিশ্ব শান্তির জন্যে, যুদ্ধের অবসানের জন্যে তিনি একটি নতুন পৃথিবী চেয়েছিলেন, অথচ কালের পরিক্রমায় ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকদের কাছে হয়ে গেলেন শয়তানি পৃথিবীর নাটের গুরু!

এই নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার তত্ত্বের একটি অংশ হলো জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থান ইউনেসকো। আর সেখানে কাজ করেন “ইলুমিনাতি পরিবার” ভ্যান ডাইকের একজন সদস্য। প্রমাণ পেলেন তো, ইউনেসকো ইলুমিনাতি সংগঠন?

ডিজনিকে নিয়ে লেখক যা বলেছেন তা আরো চিত্তাকর্ষক! ওয়াল্টার ডিজনি, যিনি ছোটদের জন্যে সিনেমা এবং কার্টুন বানান, তিনি একজন ইলুমিনাতি সদস্য, তার যুক্তি ওপরে Alive সিনেমাটি প্রসঙ্গে দেয়া হয়েছে। এই ওয়াল্টার ডিজনি নাকি গোপনে স্নাফ ফিল্ম, বিকৃত পর্ন ফিল্ম, ইত্যাদি বানান। প্রমাণ? নাহ, কোন প্রমাণ দেয়া যাবে না।
তবে কার্টুন থেকে ইলুমিনাতি সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায় অনেক। কিরকম? এই যে কার্টুনে এত মারামারি দেখায় কুকুর-বিড়াল- ইঁদুর, এবং হাঁস-মুরগীদের, এ থেকে বাচ্চারা কী শিখছে বলেন? এতেই কি প্রমাণ হয় না, যে তারা ইলুমিনাতিদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে?

ওয়াল্ট ডিজনির কার্টুনে দেখা যায় পশু-পাখিরা কথা বলছে। আরে, এর থেকে বড় প্রমাণ আর কী হতে পারে! পশুপাখিরা কি কথা বলতে পারে? এগুলি হলো জাদুবিদ্যা শেখানোর কলাকৌশল, এসবের মাধ্যমে বাচ্চাদের মাইন্ড কন্ট্রোল করা হচ্ছে। জ্বী, ইলুমিনাতি থিওরিস্টরা এমনটাই মনে করেন।

ডিজনির সুবর্ণ জয়ন্তীর সময় থিম সং কী ছিলো? “Remember the Magic”
কোন সে ম্যাজিক? ইলুমিনাতির ম্যাজিক। কী, পেলেন তো প্রমাণ?
ডিজনি বিষয়ে তার সব কথাই হাওয়া থেকে এসেছে, তবে এক জায়গায় তিনি একটি বাস্তব ঘটনার ভিত্তিতে প্রমাণ দিয়েছেন। ভিক্টর সালভা নামক একজন ডিরেক্টর চাইল্ড মলেস্টেশনের সাথে জড়িত ছিলো। সে ডিজনি থেকে Powder নামক একটি সিনেমা বানিয়েছে। অর্থাৎ ডিজনির সবাই এরকম! যদিও তাকে ডিজনি থেকে বহিষ্কার করা হয়, কিন্তু তাতে কী!

স্প্রিংমায়ারের বইয়ে যত সাক্ষীসাবুদ আছে, কারো নাম উল্লেখ করা নেই। তারা সবাই নাকি প্রাক্তন ইলুমিনাতি। তারা এসে তার কাছে যাবতীয় গোপন কথা বলে যায়। এছাড়াও আমেরিকায় “অপরাধজগৎ” জাতীয় বিভিন্ন রকম রগরগে ম্যাগাজিন আছে, সেগুলি থেকে তিনি তথ্য উপাত্ত পান। কোথায়, কবে ইউএফও দেখা গেছে, কোথায় জাদুবিদ্যার চর্চা হচ্ছে, কোথায়, এলিয়েনরা নেমেছে,এ সব তথ্য তার কাছে চলে আসে, এবং তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে, যেভাবে খুশি সেভাবে ইলুমিনাতির সদস্য বলার অধিকার রাখেন, সেগুলি বই আকারে প্রকাশিত হয়, এবং এগুলিই হলো ইলুমিনাতি বিষয়ক জ্ঞানের উৎস, এগুলিই রেফারেন্স!

এবার আসা যাক আমাদের বাংলাদেশী ইলুমিনাতি থিওরিস্ট মো আদনান আরিফ সালিমের বই প্রসঙ্গে। স্প্রিংমায়ার এবং আদনান আরিফ সালিমের বই দুটি একত্রে করলে ইলুমিনাতি ষড়যন্ত্র তত্ত্ব সম্পর্কে একটি সম্যক ধারণা পাওয়া যায়। স্প্রিংমায়ারের বইটি লেখা হয়েছে নব্বইয়ে, আর এটা সাম্প্রতিককালের বই। এখানে বর্তমান মিডিয়া, ফিল্ম, মিউজিক ইত্যাদি ক্ষেত্রগুলিতে ইলুমিনাতির প্রভাবের কথা বলা হয়েছে। সেগুলি কেমন?
এখানে তিনি বলেন, “সুনির্দিষ্ট বিষয়ের তথ্য তুলে ধরার জন্যে প্রামান্যচিত্র তথা ডকুমেন্টারি একটি গুরুত্বপূর্ণ অবলম্বন হতে পারে...একটু খেয়াল করলে দেখা যায় তাদের প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের তালিকায় থাকে বিভিন্ন গুপ্তগোষ্ঠী...”
তার ভাষ্যমতে ডকুমেন্টারি নির্মাতারা বেশিরভাগই গুপ্তগোষ্ঠী, সন্ত্রাসবাদ ইত্যাদি নিয়ে ফিল্ম বানান, এবং এগুলি ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে তৈরি করেন না, হলে মুক্তি দেন না, মানুষকে সচেতন করতে বানান। ঠিক আছে, তবে একটু খোঁজ নিলেই তিনি জানতে পারতেন, কত বিচিত্র সব বিষয়ে কতরকম ডকুমেন্টারি তৈরি হয়েছে, হচ্ছে, এবং এগুলির বেশিরভাগই যে মাসের পর মাস সিনেমা হলে রাজত্ব করে বেড়াচ্ছে না, সেটা গুগল না ঘাঁটলেও জানা যায়!
ভি ফর ভেন্ডেটা এবং ম্যাট্রিক্স, এ দুটি সিনেমাটিতে নাকি ইলুমিনাতিকে প্রকাশ করা হয়েছে রূপক আকারে। কিন্তু কীভাবে? ব্যাখ্যা নেই। সত্তরের দশকে মুক্তিপ্রাপ্ত হরর সিনেমা “The Texas Chainsaw Massacre” ইলুমিনাতিদের প্রচার প্রচারণার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, এর পেছনে যুক্তি কি, জানেন? কারণ, এখানে একটি ক্যানিবাল ফ্যামিলি দেখানো হয়েছে। আচ্ছা, তাহলে ক্যানিবালজিম নিয়ে তৈরি সব সিনেমাই কি ইলুমিনাতিদের নির্দেশ করে? পাপুয়া নিউগিনি এবং আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলের নরখাদকেরা কি ইলুমিনাতি, নাকি তাদের ধারক ও বাহক?
তিনি এরকম অসংখ্য সিনেমার উদাহরণ দিয়েছেন, বিভিন্ন জনরার, কোনটি থ্রিলার, কোনটি হরর, কোনটি যুদ্ধের, সবখানেই কোন না কোনভাবে ইলুমিনাতিকে সংযুক্ত করেছেন।
মজার কথা হলো, এই যে হিন্দি এবং বাংলা সিরিয়ালে আমাদের গৃহিনীরা মজে আছেন, এগুলোও নাকি ইলুমিনাতিদের ষড়যন্ত্র! কারণ এখানে কলহ, কুটনামি, পরকীয়া, ইত্যাদি দেখানো হয়, এবং এতে আসক্তির উপাদান আছে, অতএব ইহা ইলুমিনাতির এজেন্ডা!

তাহলে আমরা কী পেলাম?
কার্টুন ছবি-ইলুমিনাতি!
ড্রামা সিরিয়াল-ইলুমিনাতি!
যেকোন ধরণের ক্যানিবাল মুভি-ইলুমিনাতি!
যেকোন ধরণের সায়েন্স ফিকশন মুভি-ইলুমিনাতি!
তারা সম্ভবত রোমান্টিক মুভিকে এর আওতায় ধরে নি। তবে কতদিন আওতার বাইরে রাখবে, বলা যাচ্ছে না!

মিউজিকের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা খুবই হাস্যকর। এমিনেম, জাস্টিন বিবার, লেডি গাগা, ইত্যাদি শিল্পীকে তিনি ইলুমিনাতির সাথে সংশ্লিষ্ট বলেছেন। কারণ কী? ঐ যে, ওকে সাইন আর সাইন অফ হর্ন দেখান তারা বিল ক্লিনটনের মত! কেটি পেরির ডার্ক হর্স গানটিতে নাকি মিশরের পিরামিড, জাদুবিদ্যা,ইলুমিনাতি চিহ্ন ইত্যাদি দেখানোর মাধ্যমে ইলুমিনাতির বার্তা ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে, ইলুমিনাতি তো একটি প্রাচীন সংস্থা, সেই ১৭৭৬ সালের। মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে তাদের প্রভাব যদি থেকেই থাকে, সেটা হঠাৎ করে ২০০০ পরবর্তী সময়ে শুরু হলো কেন? খুবই সহজ এর উত্তর। পিরামিড, ইলুমিনাতি ইত্যাদি সংক্রান্ত ট্রেন্ড সৃষ্টি করেছেন ড্যান ব্রাউন, তার এঞ্জেলস এন্ড ডেমন উপন্যাসের মাধ্যমে। আমি পড়ি নি উপন্যাসটি, তবে এটা যে ইলুমিনাতি অবসেশনের পালে হাওয়া দিয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর একটা ট্রেন্ড শুরু হলে তা অনুসরণ করা শুরু করে সবাই। ফলে সব র্যাপার আর পপ তারকারা হয়ে যাচ্ছে ইলুমিনাতি!
আপনি গানের মধ্যে শয়তানের আছর দেখতে চান, বিকৃতি দেখতে চান, তো অত কষ্ট করে কেঁদে ককিয়ে চিহ্ন খুঁজতে হবে কেন! ব্ল্যাক মেটাল শোনেন, ডেথ মেটাল শোনেন! নরওয়েতে ব্ল্যাক মেটাল ব্যান্ড বুরজুমের সদস্যরা চার্চ পুড়িয়ে দিয়েছে, খুন-খারাপি করেছে, সেসব দেখেন না, লেগেছেন পপ আর র্যাপের বিরুদ্ধে! Enbilulugugal এর Return to Hellrokken Goat Sex এর খবর পৌঁছায় নাই আপনাদের কাছে? Dying Fetus এর Tearing inside The Womb শোনেন না কেন? এত ক্যানিবাল ক্যানিবাল করেন, Cannibal Corpse এর গানের লিরিক একটু পড়ে দেখেন তো!

প্রকাশ্যে শয়তানের জয়গান গেয়ে চলা এসব ব্যান্ডের খবর আপনাদের পরবর্তী আর্টিকেল এবং বইয়ে থাকছে আশা করি।

মিডিয়া, মিউজিক এবং সিনেমার ক্ষেত্রে ইলুমিনাতির উল্লেখ করেছেন, তা না হয় মানলাম। কিন্তু আপনি যখন আপনার বইয়ে লেখেন, “আইজ্যাক নিউটন প্রতিদিন সকালে আর যাই করেন, মলমূত্র তো অন্তত ত্যাগ করতেন, সেটাও তো ওপর থেকে নিচে পড়তো, তখন কেন এটা নিয়ে চিন্তা করলেন না। আর আপেলটা তার নাকের ডগায় পড়লে এত চিন্তা না করে ওটা তুলে কামড় দেয়ার কথা। কিন্তু অবাক কান্ড, আবিষ্কারের মিথ বলছে, তিনি আপেলে কামড় দিলেন না”
এটার সাথে “পরে যখন ফ্রিম্যাসন লজের সাথে এই নিউটনেরই সম্পৃক্ত থাজার কথা চাউর হয়েছে, তখন অনেকেই নড়েচড়ে বসেছেন” এর জোড়াতালি দেয়ার পরে কী বোঝাতে চান, কী গেলাতে চান, নিজেই ভালো জানেন!
আবার লিখেছেন “এত জায়গা থাকতে বিজ্ঞানীরা তাদের বুদ্ধির জোর দেখাতে কেনো হেলানো মিনারে উঠতে গেলেন। দুনিয়ায় তো আরো অনেক জায়গা ছিলো। এ ধরণের কিছু বিষয় ইলুমিনাতিপূর্ব বিভিন্ন গুপ্তগোষ্ঠীর সতর্ক অবস্থানের প্রতি নির্দেশ করে”।
জ্বী, না পিসার হেলানো মিনারে পড়ন্ত বস্তু এবং বাতাসের বাধার এক্সপেরিমেন্টটি করার কারণ ছিলো, সেখান থেকে ট্রাজেক্টরিটা ভালোমত পাওয়া যেতো। হেলানো থাকার ফলে সেখান থেকে সঠিকভাবে নিচে পড়তে পারতো কোন বস্তু।
ইলুমিনাতি থিওরিস্টরা ঠিক এভাবেই ফাঁপা যুক্তি আর অনুমান দিয়ে কল্পনার ফানুস তৈরি করে, আর জনগণ তা মহানন্দে গিলে ফেলে!

ইলুমিনাতি আসলে কী ছিলো, আসলেই ছিলো কি না।

হ্যাঁ, ইলুমিনাতি বলে আসলেই কিছু ছিলো, এবং তা একটি গুপ্ত সংগঠনই ছিলো। জার্মানির বাভারিয়াতে এই সংগঠনের জন্ম। এর উদ্যোক্তা ছিলেন এ্যাডাম ওয়েইশপ্ট নামক একজন ভদ্রলোক। এ্যাডাম ওয়েইশপ্টের ইলুমিনাতি সংগঠন কীভাবে জার্মানি থেকে ফ্রান্স, ইংল্যান্ড হয়ে আমেরিকাতে আতঙ্ক তৈরি করেছিলো তার বিস্তারিত বিবরণ আছে Vernon Stauffer নামক একজন আমেরিকান অধ্যাপকের থিসিসে। ইতিহাসবিদগণ এই থিসিস পেপারটিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখেন, এবং প্রশংসা করেন। এটি এখন বই আকারেও পাওয়া যায়। “The Bavarian Illuminati in America: The New England Conspiracy Scare” নামে। এটা এ্যামাজন থেকে চাইলে কিনে নিতে পারেন, আর নাহলে অন্য উপায় তো আছেই!
যাই হোক, আমি এই বই থেকে ইলুমিনাতি আতঙ্কের উদ্ভব এবং ক্রমবিকাশ খুব সংক্ষেপে বলবো।
১। এ্যাডাম ওয়েইশপট একজন কৌতূহলী বালক ছিলেন। তিনি প্রশ্ন করতে ভালোবাসতেন। তৎকালীন আবদ্ধ সমাজ তার এই প্রশ্ন করা ভালো চোখে দেখতো না।
২। পাদ্রীদের সাথে তার চিন্তা চেতনায় মিলতো না। University of Ingolstadt এর আইন বিভাগের ডিন হন একটা সময়, কিন্তু তার মুক্তচিন্তা অন্যদের আহত করতো। তার স্যালারি নিয়েও প্রতিবাদ হত।
৩। তিনি ফ্রি ম্যাসনারিতে যুক্ত হতে চেয়েছিলেন, কিন্তু অর্থাভাবে পারেন নি।
৪। অবশেষে নিজেই একটি গোষ্ঠী খুলে ফেলেন ইলুমিনাতি নামে, ১৭৭৬ সালে। (জ্বী, এখান থেকেই শুরু)।
৫। ইলুমিনাতি বেশ কয়েক বছর ভালোভাবে চলার পর একজন ফ্রি ম্যাসনারি সেখানে যুক্ত হন। তার নাম Adolf Franz Friederich Knigge, ১৭৮০ সালে আবির্ভাব ঘটে তার।
৬। মূলত এখান থেকেই ফ্রিম্যাসনারি আর ইলুমিনাতিকে এক করে দেখা, এবং বৃহৎ ষড়যন্ত্রের অংশ মনে করা শুরু।
৭। Adolf Franz Friederich Knigge ইলুমিনাতি সংগঠনটির এ্যামেচারিশ কাঠামোর পরিবর্ধন এবং পরিমার্জন করতে শুরু করেন নিজ প্রজ্ঞা এবং সাংঠনিক দক্ষতা দ্বারা।
৮। একটা সময় এ্যাডাম ওয়েইশপট এর মধ্যে স্বৈরাচারী মনোভাব দেখা দেয়, এবং সংগঠনে বিভেদ ছড়িয়ে পড়ে।
৯। ১৭৮৪ সালে বাভারিয়ার ইলেকটর চার্লস থিওডর গোপন সংগঠনের ওপর সমন জারি করেন, যারা রাজ্যের প্রচলিত আইন, রীতিনীতি, এবং কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ডকে মান্য করে না।
১০। ইলুমিনাতি সংগঠনের ওপর ঠিক তখনই খড়গ নেমে না আসলেও প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। শুরু হয় অনুসন্ধান, আর গুজব।
১১। একটা সময় তাদের কার্যালয় থেকে কিছু সাংকেতিক ভাষায় রচিত চিঠি, বই পুস্তক এবং ক্যালেন্ডার পাওয়া গেলে তাদের নিয়ে সন্দেহ তুঙ্গে ওঠে।
১২। অবশেষে ১৭৮৭ সালে বাভারিয়ার ডিউক আনুষ্ঠানিকভাবে ইলুমিনাতিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।
১৩। Charles Frederick Bahrdt নামক একজন সদস্যের নেতৃত্বে ইলুমিনাতির বিভিন্ন সদস্যকে জার্মানির বিভিন্ন জায়গায় জ্ঞান প্রচার এবং কুসংস্কার নির্মূলের কাজে দেয়া হয়।
১৪। তাদের কাছে অনেকেই ইলুমিনাতি সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্ন করে, এবং তারা রহস্য করে উত্তর দেয়।
১৫। একটা সময় বইয়ের প্রকাশকদের সাথে তাদের বেশ মিলমিশ হয়, এবং তাদের দেয়া তথ্যকে অতিরঞ্জিত করে, বিভিন্ন রকম ফ্যান্টাসি মিশিয়ে বেশ কিছু বই রচনা করা হয়, যেগুলি বেস্ট সেলার হয় সেসময়।

ইলুমিনাতি বিষয়ক আলোড়ন পরে অনেকদিন আর তেমন হয় নি। তবে তা আবার শুরু হয় ষাটের দশকে। প্লেবয় পত্রিকার সাংবাদিক Robert Anton Wilson এবং Robert Shea একটি ব্যঙ্গ ধর্মের প্রচলন করেন- Principia Discordia নামে। সেটা নিয়ে একটি বইও লেখেন। প্লেবয় পত্রিকায় কাল্পনিক কিছু চিঠিপত্র লেখেন এই ধর্ম এবং ধর্মের সাথে ইলুমিনাতিদের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে, নিজেরাই নিজেদের সাথে, পক্ষে বিপক্ষে!
Principia Discordia ধর্মের নীতি অনুসারে একই নামে একটি বইও লেখা হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে লেখা হয় The Illuminatus! Trilogy নামে তিনটি উপন্যাসের একটি সিরিজ, যেটি ছিলো একটি প্যারডি উপন্যাস। সেখানে নানারকম উদ্ভট এবং অদ্ভুত কল্পনার মাধ্যমে ইলুমিনাতির সংশ্লিষ্টতাকে নতুনভাবে জাগিয়ে তোলা হয়। এর পর থেকে আর থেমে থাকে নি ইলুমিনাতি সংক্রান্ত গালগপ্প। তাদের বইয়ের বর্ণিত বিভিন্ন কল্পিত কাহিনীকে আজ রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে, তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন তত্ত্ব! আর ড্যান ব্রাউন তার এঞ্জেলস এন্ড ডেমন উপন্যাসের মাধ্যমে কীভাবে এটিকে মার্কেটিং টুল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, তা তো আগেই লিখেছি!

Comments

Popular posts from this blog

প্যাথেটিক হোমিওপ্যাথি, কেন বিশ্বাস রাখছেন!

জ্বী না, সিয়েরালিওনের দ্বিতীয় ভাষা বাংলা নয়!