আমি যেভাবে জ্বীন দেখলাম (সম্পূর্ণ সত্য ঘটনা)


এটা একটা সম্পূর্ন সত্য ঘটনা। তাই অবিশ্বাসীরা ভ্রু কুঁচকে তাকালে আমার কিছুই করার নেই। ঘটনার ভয়াল বিবরণে সত্যিকারের নামগুলো প্রকাশ করা অস্বস্তিকর ঠেকছে আমার কাছে। তাই বন্ধুদের সবার নিকনেম ব্যবহার করব।
ঘটনাটা আমার ভার্সিটি লাইফের। ২০০১ এ, তখন ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি। হলে সিট পাইনি, বাইরে মেসে থাকি। আমাদের মেসটা ছিলো একটু দূরে। ডাকাতিয়া বিলের কাছাকাছি। গভীর রাতে আমরা চা সিগারেট (তখনও ধরিনি এটা) খেয়ে নিঝুম নির্জন বিলের ধারে বসে গান গাইতাম, বেশ কাটছিলো জীবন। এর মাঝে এক বৃহস্পতিবার রাতে আমাদের সিআর পয়মাল এসে জানালো যে, ওদের মেসে মেকানিক্যালের একটা ছেলে -মোসাদ, নাকি জ্বীন দেখাতে পারে। আমি তো শুনে হেসেই উড়ি্যে দিই আর কি! কিন্তু আমার রুমমেটদের কাউকে কাউকে বেশ সিরিয়াস মনে হল। বিশেষ করে টম কে। কারও অবিশ্বাস কারো সংশয় আর কারো উদগ্র ইচ্ছা, সব মিলে যা দাঁড়ালো, তা হল জ্বীন দেখার উদগ্র কৌতূহল।
যেতে যেতে কথা হচ্ছিলো পয়মালের সাথে। ও তখন সদ্য তাবলীগের এক চিল্লা কমপ্লিট করে ফিরেছে।মুখে চাপদাঁড়ি, জোব্বাজুব্বা পরে ঘুরে বেড়ায়। মাথায় পাগড়ীর মত কি যেন একটা পরে, আর কিছুক্ষণ পর পর বাঁজখাই কন্ঠে আমাদের চমকে দিয়ে "আল্লাহু আকবর"  বা অন্যান্য প্রশংসাসূচক বাণী উচ্চারণ করে যথেষ্ঠ পরিতৃপ্তি লাভ করে। নির্জন, অন্ধকার পথে ওর মুখে জ্বীন দেখার কাহিনী শুনতে শুনতে অবিশ্বাসী আমারো গা ছমছম করে ওঠে।
 "উপদেষ্টা" যথারীতি এই বিষয়ে তার জ্ঞান জাহির করতে থাকে
 মাদি'টা অন্যান্যদিনের চেয়ে অনেক চুপচাপ।
 আঁতেল টাইপের "সোনামনি" ভ্রু কুঁচকে কিসের হিসেব মেলানোয় যেন ব্যস্ত।
"বরযাত্রী" অবশ্য বরাবরের মতই টেনশনবিহীন।
সবচেয়ে ছটফট করছিলো "টম"। ওর নাকি জ্বীনকে কি যেন জিজ্ঞাসা করার আছে।
আর আমি কৌতুহলে ছটফট করছিলাম।

(সবার আসল নাম প্রকাশ করতে না পারার জন্যে আবারও দুঃখ প্রকাশ করছি। ঘটনাটা ঠিক যা হবার কথা ছিলো তা হয়নি, এখনো মনে পড়লে.....থাক পরেই বলি)

ওদের মেসে যাওয়ার পরে দেখা হল ব্যাম্বিনো, সুন্দরী সবার সাথে। ওদেরকে খুঁচিয়ে আসল ঘটনা বের করার চেষ্টা করলাম। সুন্দরী বেশি কথা বলতে চাইলোনা ও ব্যাপারে। ব্যাম্বিনো মহা আগ্রহের সাথে বয়ান করে চলল ওর অভিজ্ঞতা। আজকেও জ্বীন নামানো হব শুনে ওর মাঝে কৌতুহল এবং আতঙ্কের মিশ্রণ। সেদিন অল্পের জন্যে ভয়াবহ কিছু ঘটেনি, আজকে যে কিছু হবেনা তার নিশ্চয়তা কি? শঙ্কিত দেখালো ওকে।
একটু পরে মোসাদের সাথে দেখা হল। একে আগে দেখিনি, এই নাকি জ্বীন দেখাবে। ও আমাদের সবাইকে একটা ঘরের মধ্যে নিয়ে গেলো। জলদগম্ভীর কন্ঠে জানালো যে একটু পরেই জ্বীন আসবে।
আমরা যেন নীরবতা পালন করি।
কোনরকম বেয়াদবি না করি।
শরীর যেন সম্পূর্নভাবে পবিত্র থাকে। সবাইকে অযু করে আসার নির্দেশ দিলো।
টম ভাঙা ভাঙা কন্ঠে ঢোক গিলে কোনমতে জিজ্ঞাসা করল যে জ্বীনকে দুটো প্রশ্ন করা যাবে কিনা। মোসাদ জানালো, একটি প্রশ্ন করা যেতে পারে, এবং প্রশ্নটি অবশ্যই এমন হতে হবে যেন উনি রেগে না যান। এখন কিসে "উনি" রাগ করেন আর না করেন ভেবে তো আমরা প্রমাদ গুনলাম।

মোসাদ জানালো জ্বীন আসার সময় কোনরকম আলো থাকা চলবেনা। স্বাভাবিক। এরকমই শুনে এসেছি সবসময়। কিন্তু যখন মেইন সুইচ নিভিয়ে পুরো ঘর অন্ধকার করে দেয়া হলো, বুকের ভেতর ছ্যাৎ করে উঠলো। খোদা জানেন,কি অভিজ্ঞতা অপেক্ষা করছে আমাদের জন্যে। আগে যদি ঘুনাক্ষরেও জানতাম যে এমন অভিজ্ঞতা হবে তাহলে কি আর ওখানে থাকতাম!

লাইট নিভিয়ে দেয়া হলো।
আমরা সবাই দল বেঁধে অযু করে আসলাম, ঘুটঘুটে অন্ধকারের ভেতর।
এখন জ্বীন দেখার অপেক্ষা। বুকের ভেতর হাতুড়িপেটা হচ্ছে। মোসাদ বিড়বিড় করে কি যেন বলছে। ওর স্বর ধীরে ধীরে ওপরে উঠছে। টম আমাকে খামচে ধরে আছে। আমার গলা শুকিয়ে কাঠ। ঠিক সেইসময়...

ঠিক সেইসময় কোন বেকুব যেন বাতি জ্বালিয়ে দিলো। আর প্রচন্ড একটা অট্টহাসির শব্দ। পাশে বসে থাকা টমের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলাম। একি, সবার এই দশা হলো কেন!!

সবার মুখে লাল রং! হারামজাদাগুলো বাথরুমের বালটির পানিতে কড়া লাল রং মিশিয়ে রেখেছিলো, অযু করার সময় যেটা আমাদের মুখে লেগে মোটামুটি জ্বীন বা ভুত,যাই হোক কিছু একটার সুকৃতি দিয়েছে!
পয়মাল,ব্যাম্বিনো,সুন্দরী আর মোসাদের হাসতে হাসতে ফুসফুস ক্ষয়ে যাবার দশা! কোনমতে কেউ একজন বলল, "দেখ শালা, নিজেদের দিকে তাকিয়ে দেখ! একদম জ্বীনের বাদশা সেজে আছে একেকজন!"
আমাদের বলার কিছুই ছিলোনা! সবাই বেশ মজা পেলেও টম খানিকটা আপসেট হয়েছিলো ওর মহামূল্যবান প্রশ্নগুলো জ্বীনকে করতে না পারায়!

পরিশিষ্ট: তবে আমরাও ছাড়িনি! এ ঘটনা বিহারী,গিদর এদের মেসে প্রচার করে দিয়েছিলাম, এবং ওরা মোসাদ গংকে জ্বীন দেখানোর মজা টের পাইয়ে দিয়েছিলো! অযু করার সময় গিদরগোষ্ঠি বালটি থেকে পানি ঢেলে ওদের মেঝে, বিছানা চাদর সব একাকার করে ফেলেছিলো! পাপ ছাড়েনা বাপকে!

Comments

  1. আসলেই অত্যান্ত ভয়াবহ ঘটনা 😱

    ReplyDelete
  2. হি হি হি হি হি অত্যন্ত চমকপ্রদ ঘটনা

    ReplyDelete
  3. হি হি হি হি হি অত্যন্ত চমকপ্রদ ঘটনা

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

প্যাথেটিক হোমিওপ্যাথি, কেন বিশ্বাস রাখছেন!

মুভি রিভিউ 'মাদার' এ্যারোনোফস্কির মেইনস্ট্রিম ওয়ান্ডার!

ইলুমিনাতি, একটি মার্কেটিং টুল; অথবা ছহি ইলুমিনাতি শিক্ষা