তিথিসমগ্র
তিথি আমার প্রেমিকা। সমাজ অবশ্য তাকে আমার স্ত্রী বলে আখ্যায়িত করে থাকে। সে আবার আমার দুই সন্তানের মা ও। তো যে আমার এত কিছু, তাকে নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সাহিত্যকর্ম রচনা করা আমার অবশ্যকর্তব্য ছিলো, যেহেতু আমি শুধু প্রেমিক না, লেখকও। এই ব্লগপোস্টে তাকে নিয়ে রচিত বিভিন্ন সাহিত্যকর্মগুলি একসাথে রাখছি।
কবিতা- রোজ রোজ ঝোঁক ঝোঁক
রচনাকাল সেপ্টেম্বর ২০১১, ভোর ৬-২৪
রোজ ভাবি বলব তোকে
হয়েছে যা হয়নি ঝোঁকে
তবু কেন পাথর শোকে
হয়েছিস নীরব এমন?
রোজ তোকে ভুলব বলে
কালো চক স্লেট ধবলে
কাটাকুটি করেই চলে
খুঁজে ফেরে অতীত গহন...
রোজ তুই দিস অভিশাপ
মুছিস- আদর, ছোঁয়া,ছাপ
ইরেজারে ভরা তোর খাপ
আমাকেও একটা দিবি?
রোজ তুই একলা ঘরে
জেগে রাত দেখিস ভোরে
কত পাখি যায় উড়ে যায়
স্বপ্নেরা পাহাড়সম-
ছিলো, আজ ছোট্ট ঢিবি...
আমারও আছে ইরেজার
মুছি, অতীত না তোকে?
প্রশ্নটা এখন করার-
করবই, নয়তো ঝোঁকে!
আর মিছে করিসনে শোক
হাত ধর, সকল কুহক-
দেখবি মিলিয়ে যাবে
দেখবি হারিয়ে যাবে...
রোজ রোজ এখন থেকে
'ভালোবাসি' বলব তোকে
অথবা হঠাৎ ঝোঁকে
নিয়ে যাবো কল্পলোকে
পটভূমি- কবি এখানে বলতে চেয়েছেন, সকল দূরত্ব ঘুঁচিয়ে, অতীত ভুলে দুজনে মিলে সামনে এগুতে হবে। লেখক মাঝখানে কিছুদিন ভাব ধরে ছিলেন, অবহেলা করতেন, সেটার দায়মোচনেরও একটা প্রয়াস ছিলো।
লিরিক- দীপ্তিময়ী
রচনাকাল- ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ৩:০২
ঘুমিয়েছো দীপ্তিময়ী?
রাত এখন বেজে সাড়ে তিন
ক্লান্তিকে করে বিজয়ী
নিয়েছো কটা রিলাক্সিন?
ঘুমচোখে তাকাও যদি
কতদূর দেখতে পারো?
দেখো আমার ঘর অবধি
তমসা কাটাতে পারো?
অনেক হল আঁধারবিলাস
ছুড়ে ফেলো তিমিরচাদর
চোখে দেখো, কী অভিলাষ?
আমাকে দাও আলোকআদর!
স্পর্শিত অহংকারে
তোমার ওই মুখের জ্যোতি
দেখে চলি রাতকাবারে
ঈর্ষাতে কে করে ভ্রুকুটি!
ঘুমিয়োনা দীপ্তিময়ী
রাত কেবল বেজে সাড়ে তিন!
ভালোবাসা হোক বিজয়ী
ভালোবেসে যাও প্রতিদিন..."
রাত এখন বেজে সাড়ে তিন
ক্লান্তিকে করে বিজয়ী
নিয়েছো কটা রিলাক্সিন?
ঘুমচোখে তাকাও যদি
কতদূর দেখতে পারো?
দেখো আমার ঘর অবধি
তমসা কাটাতে পারো?
অনেক হল আঁধারবিলাস
ছুড়ে ফেলো তিমিরচাদর
চোখে দেখো, কী অভিলাষ?
আমাকে দাও আলোকআদর!
স্পর্শিত অহংকারে
তোমার ওই মুখের জ্যোতি
দেখে চলি রাতকাবারে
ঈর্ষাতে কে করে ভ্রুকুটি!
ঘুমিয়োনা দীপ্তিময়ী
রাত কেবল বেজে সাড়ে তিন!
ভালোবাসা হোক বিজয়ী
ভালোবেসে যাও প্রতিদিন..."
পটভূমি- প্রথম লিরিকটি লেখার অল্প কদিন পরেই এটি লেখা। তখন সবকিছু ঠিকঠাক চলছিলো। টইটম্বুর প্রেম। সেই প্রেমে আকূল হয়ে লেখা। এখানে উল্লেখ্য, আমার গল্প কবিতায় তিথিকে দীপ্তিময়ী বলে এসেছি সবসময়। এই ছন্দকবিতার মাধ্যমেই এর সূত্রপাত।
গল্প-ঘুমিয়ো না দীপ্তিময়ী
রচনাকাল- ২৩শে মে ২০১৩, রাত ২-২১
পটভূমি- বিয়ের পর এক গুমোট বাঁধা সময়ের বরফ গলানোর জন্যে এই গল্পটি লেখা। এটি একটি পত্রসাহিত্য বলা যায়। এই গল্প লেখার আগে আমি তরল আগুন পান করে খুব বাজে আচরণ করেছিলাম। সেই আমাকে আমি সমাধি দিয়েছি।
গল্পটির কিছু অংশ - "
গল্প- হিমসকালের রোদনকশা
রচনাকাল- ১৯শে ডিসেম্বর ২০১৩, ভোর ৩-০২
পটভূমি- তিথি মা হবার পর, মিতিন হবার পর ওর চেহারা খুব মায়ামায়া হয়ে গেলো। একদিন ও একটা ফুলের নকশাঅলা জামা পরে খাট থেকে নামতে গিয়ে জামা পেঁচিয়ে পড়ে যাচ্ছিলো প্রায়। আমি ওকে ধরে ফেলি। ঐ অবস্থায় ওর চোখে যে অসহায়ত্ব আর আমার প্রতি নির্ভরতা ছিলো, তা আমার চিরকাল মনে থাকবে। অসম্ভব সুন্দর একটা দৃশ্য ছিলো।
পুরোটা পড়ুন এখান থেকে
কবিতা- বিরহকাল
রচনাকাল- ২০১৪ এর সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে। আমি তখন রিহ্যাবে। আমাদের জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ সময়। আমার সঙ্গী বলতে শুধু একটা কলম এক দিস্তা কাগজ, আর রবীন্দ্রনাথের গল্পগুচ্ছ। ভেবেছিলাম ঐ সময়টায় অনেক কিছু লিখবো। কিন্তু একটি লিরিক ছাড়া আর কিছুই লেখা হয় নি। গল্পগুচ্ছেরও বেশি গল্প পড়তে পারি নি। ভুলতে চাই সে সময়টা।
কেমন আছিস আমায় ছাড়া?
একাকী খুব, ছন্নছাড়া?
চোখের জলে ঝাঁপসা বালিস,
শুনছে কি তোর সকল নালিশ?
কেমন আছে ঠোঁট দুটো তোর?
সিক্ত ছোঁয়ার স্বপ্নে বিভোর?
আমারও যে কাঁদছে এ বুক,
ফুটবে কবে অধর শালুক?
কেমনে থাকি তোকে ছাড়া?
নিজকে দিই দোষ, 'হতচ্ছারা!'
আর একটিবার সুযোগ পেলে
স্বপ্নডানা পেখম মেলে,
উড়বে নাচবে গাইবে যে গান,
আমার মুখে বুকটি গুঁজে
শুভ্র সকাল পাবি খুঁজে,
ভুলে যাবি সকল অভিমান।
একাকী খুব, ছন্নছাড়া?
চোখের জলে ঝাঁপসা বালিস,
শুনছে কি তোর সকল নালিশ?
কেমন আছে ঠোঁট দুটো তোর?
সিক্ত ছোঁয়ার স্বপ্নে বিভোর?
আমারও যে কাঁদছে এ বুক,
ফুটবে কবে অধর শালুক?
কেমনে থাকি তোকে ছাড়া?
নিজকে দিই দোষ, 'হতচ্ছারা!'
আর একটিবার সুযোগ পেলে
স্বপ্নডানা পেখম মেলে,
উড়বে নাচবে গাইবে যে গান,
আমার মুখে বুকটি গুঁজে
শুভ্র সকাল পাবি খুঁজে,
ভুলে যাবি সকল অভিমান।
গল্প- দীপ্তিময়ীর হৃৎঅঞ্চলে
রচনাকাল- ৪ঠা এপ্রিল ২০১৫, রাত ৮-৩২
পটভূমি- বলার মত তেমন কিছু নয়। ঐ আর কী, ড্রিংক করে সিনক্রিয়েট করেছিলাম। এরপর সে মন খারাপ করে ছিলো। মন ভালো করার জন্যে লেখা।
পুরো গল্পটা পড়ুন এখান থেকে
গল্প- তোমার জন্যে নয়
রচনাকাল- ২৩শে জুলাই ২০১৫
এটার সাথে প্রেম ভালোবাসা কিছু নেই। এটা একটা প্রতিশোধমূলক গল্প। সে মেয়েদের গোপন গ্রুপে আমার তখনকার দূরবস্থা নিয়ে ছদ্মনামে পোস্ট দিয়েছিলো। সেটা দেখে আমি ভীষণ রেগে যাই, এবং প্রতিশোধ নিতে গল্পটি লিখি, যার মূল বিষয়বস্তু ছিলো এই, "আমি আমার মত করে চলবো, জীবন ঠিকই আমার মত করে উপভোগ করবো, তুমি খালি চেয়ে চেয়ে দেখবে, এর কিছুই তোমার জন্যে নয়"। হাহা! কী বোকা ছিলাম!
কিছু অংশ- আমরা দুজনেই বুঝতে পারি হবে না, এইভাবে হবে না। আদৌ কি হবার দরকার আছে? এই প্রশ্নটাও মাথায় ঘোরে। হঠাৎ এক চিৎকারে আমাদের সম্বিত ফেরে। ঘন্টাধ্বনি থেমে যায়। বুড়ো ঘন্টাবাদক বুক চেপে ধরে বসে আছে। চারিদিকের সব আলো নিভে যাচ্ছে। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে চড়ুই পাখির টুইটকার, আর অজানা বাদকের মাউথঅর্গান। চারিপাশের সবুজ প্রকৃতি শীতকালের রূক্ষ মরণ থাবায় রঙ হারিয়ে ফেলছে।
আমরা বুঝে ফেলি আমাদের হবে না। তবুও চিঠি একটা শেষ চেষ্টা করে। কিভাবে যে ওর মনের মধ্যে এমন প্রেমভাব জেগে উঠলো তা আমার বাকি জীবনে একটা রহস্য হয়ে থাকবে। আমাকে সে দেখেছে পাঁড় মাতাল, দায়িত্বজ্ঞানহীন, নোংরা, অগোছালো, এলোমেলো হিসেবে। আমার পরিবারকে সে তুচ্ছ করেছে তার পরিবারের সাথে মেলাতে গিয়ে। তারপরেও সে কেন যেন বললো, "দেখো, আরেকটা সুযোগ নেই আমরা। আমার হাতটা ধরো"
হাত ধরাতে আমার কোন আপত্তি নেই, তবে এই হাত আমাকে কতদূরে নিয়ে যাবে তা নিয়ে আমি সন্দিহান।
গল্প- মিঠি, আমি এবং অলীক উড্ডয়ন
রচনাকাল- ১১ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৫:৪৬
পটভূমি- তো যথারীতি সেই ঘটনার পর আমাদের আবার উথালপাথাল প্রেম শুরু হলো। আমিও নিজেকে শুধরে নিতে থাকলাম। একদিন ডেটিং করতে গিয়ে কফি খেতে খেতে দুজন মিলে একটি গল্পের থিম নির্ধারণ করি। সেটি নিয়ে দুইজন আলাদাভাবে গল্প লিখি। গল্পের বিষয়বস্তু ছিলো, একঘেয়ে বিবাহিত জীবনেও মাঝেমধ্যে অলৌকিক কিছু ঘটে যেতে পারে। ভালোবাসাই এনে দিতে পারে সেই অলীক স্বাদ।
কিছু অংশ- মিঠির জন্যে অপেক্ষা করে আছি আমি। আজ বিকেল পাঁচটায় ওর এখানে আসার কথা। আমি একটু আগেই চলে এসেছি। অপেক্ষা করতে খারাপ লাগে না আমার। সপ্তাহের একটা দিন আমরা আমাদের সীমিত আয়ের কিছু অংশ ব্যয় করে রিকশায় চড়ে ঘুরি, সিনেমা দেখি, আর ভালোমন্দ কিছু খাই। এই দিনটায় আমরা ভুলে যাই নাগরিক জীবনের ক্লেশ এবং ক্লান্তি, ক্যারিয়ার গঠনের ইঁদুর দৌড়, সবরকম দায়বদ্ধতা, এবং ভবিষ্যতের চিন্তা। এসব ভাবতে ভাবতে আনমনা হয়ে গিয়েছিলাম, তাই মিঠি যখন আমার পেছনে দাঁড়িয়ে দু হাত দিয়ে আমার চোখ ঢেকে জিজ্ঞেস করলো "বলোতো আমি কে?" তখন তার আগমনঘটিত আনন্দে মনটা উড়ুউড়ু হলেও আমি কৃত্রিম গাম্ভীর্য বজায় রেখে বললাম "জানি না"। তারপর কিছু দুষ্টুমি, কিছু খুনসুটির পরে আমরা এই বিকেল থেকে সন্ধ্যার পরিকল্পনা ঠিক করে ফেলি। প্রথমে রিকশায় ভ্রমণ। ঘন্টাচুক্তিতে রিকশা ভাড়া করে শহরের এমাথা থেকে ওমাথা। মিঠি আমার পাশে বসে আছে। ওকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরি আমি। আমার ভেতরে একটা খরস্রোতা পাহাড়ী নদীর ঢেউ ঝাপটা মারতে থাকে। ওরা আমাকে বলে, "আরো নিবিড়, আরো ঘনিষ্ঠ হও। স্রোতের তোড়ে সব ভাসিয়ে নিয়ে যাও! চুম্বন করো, হাত ধরো, ওকে পিষে ফেলো, আঁকড়ে ধরো ও তোমার, শুধুই তোমার!"। কথাগুলো আমার বেশ পছন্দ হয়, তবে এই হুডখোলা রিকশায় জনবহুল স্থানে তা সমাধা করতে আড়ষ্ট লাগে। তাই ওসব অন্য কোন সময়ের জন্যে গচ্ছিত রাখি। হাত ধরে থাকি, এতেই অঢেল সুখ।
তিথির সাথে সাত বছর ধরে আছি। এক বছর প্রেম, ছয় বছরের বিবাহিত জীবন। আমাদের সাথে কারো তুলনা হয় না। কারণ আমরা উড্ডয়নের গোপন সূত্রটা জানি। দুটো দেবশিশু আসার পরেও তিথি শুধুমাত্র একজন মা হয়ে থাকে নি। আমরা উড়ি মাঝেমধ্যে একসাথে। আমাদের উড্ডয়নকাল দীর্ঘ হোক!
প্রথম গল্পটার পটভূমি পড়ে হৃদয়টা ভিজে উঠল।
ReplyDeleteপড়ার জন্যে ধন্যবাদ বাপ্পী :)
Delete