ফুটনোটস

সাধারণত ফুটনোটস, পাদটীকা বা নির্ঘন্টগুলো কোন লেখার শেষে দেয়া থাকে। কিন্তু এখন যে গল্পটি আমি লিখতে যাচ্ছি, তার ফুটনোটস গুলো আগেই দিয়ে দেবো। তারপর দেখা যাক গল্পটি কতদূর এগোয়।
ভোট- একটি গণতান্ত্রিক অধিকার, যার দ্বারা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় (কাল্পনিক)।
গরু-ছাগল- গৃহপালিত পশু। যারা রাস্তায় নামলে ড্রাইভার যদি তাদের পাশ কাটিয়ে যেতে পারে, তবে তা ড্রাইভারি করার স্বীকৃতি বলে গণ্য হয়।
লঞ্চ- একটি যাত্রীবাহী জলজ পরিবহন। এখানে বিশেষ বিশেষ পার্বণে মৃত্যুর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হাজারে হাজার যাত্রী ওঠে।
ঋণখেলাপী- কোটিপতিদের একটি স্ট্যাটাস। ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে শোধ না করে তারা নিজেদেরকে অভিজাত শ্রেণীভূক্ত মনে করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়- সরকারী দলীয় ক্যাডারদের বাসস্থান। মাঝেমধ্যে তারা পড়াশোনা করে থাকেন। (এই অংশটি কাল্পনিক)।
ক্রসফায়ার- আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা পরিচালিত রিয়্যাল লাইফ এ্যাকশন ফ্লিম। যেখানে তারাই সবসময় বিজয়ী হয়।
শেহা- বংশানুক্রমে প্রাপ্ত অঢেল ক্ষমতার অধিকারী বহু ডিগ্রিখচিত রাষ্ট্রনায়ক (কাল্পনিক)
বেজি - স্বামী সূত্রে পাওয়া অঢেল ক্ষমতার অধিকারী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। বিভিন্ন দলিল, নথিতে তার জন্মদিনের সংখ্যা পাওয়া গেছে পাঁচটি। (কাল্পনিক)
হেফাজতে ইসলাম - ধর্মকে আত্মীকরণ করে আফগানিস্তানকে আদর্শ রাষ্ট্র হিসেবে ধরে নিয়ে প্রতিরাতে চরম পুলকে স্বপ্নদোষ হওয়া একটি চরমপন্থী সংগঠন।
কট্টর নাস্তিক-ভুল সময়ে ভুল জায়গায় জন্মগ্রহণ করা ফেইম সিকার এ্যাসাইলাম প্রার্থী ভীতসন্ত্রস্ত কলম সৈনিক।
মডারেট মুসলমান - ইসলাম ধর্ম পালনকারী তীব্র অনুভূতিশীল ব্যক্তি। যারা প্রতিপক্ষের কল্লা ফেলে দিলে মুখে কৃত্রিম গাম্ভীর্য বজায় রেখে আমিও, যদি, তবে ইত্যাদি শব্দ প্রয়োগ করে মনে মনে পৈশাচিক বুনো উল্লাসে মেতে ওঠেন।
রাজাকার - যুদ্ধের সময় বেঈমানী করা বরাহ ছানা বিশেষ। যাদেরকে দেশের বেশিরভাগ মানুষ ঘৃণা করলেও রাজনৈতিক ধারা-প্রবাহের মধ্যে বিচক্ষণতা দেখিয়ে বিভিন্ন দলের লেজ হয়ে পুরো দেহটিকে নাড়ানোর চেষ্টা করছে।
সমকামী- প্রকৃতির নিয়মকে অগ্রাহ্য করা পায়ুপথযাত্রী।
হিজাব- নিজেকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলা এবং একই সাথে ধর্মীয় নিয়ম মেনে চলার উদ্দেশ্যে তৈরি এক ধরণের পোষাক, তরুণীদের জন্যে।
কর্পোরেট সংস্থা- ধীরে ধীরে ভগবানের চেয়েও শক্তিধর হয়ে ওঠা, বিশেষ দিনে জনগণের অনুভূতিগুলো নিয়ে ছিনিমিনি খেলা বিশেষ সংস্থা।
গলায় দড়ি - শুভ্র চুল এবং গোঁফের অধিকারী বয়োজৈষ্ঠ একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির রোমান্টিক ভাবালুতা।
শাহবাগ- অনির্মিত থেকে যাওয়া স্বপ্নের হাইওয়ে।
রাজন- মোবাইল ক্যামেরা দিয়ে নির্মিত জনপ্রিয় স্নাফ মুভির ভিকটিম।
সেলফি - নার্সিসিস্ট, মানুষদের দ্বারা আবিষ্কৃত জনপ্রিয় এবং বোকাটে,উজবুকি (ক্ষেত্রবিশেষে) মোবাইল ফোন/ক্যামেরা এ্যাপ্লিকেশন।
চাপাতি - নাস্তিক নিধনে লিপ্ত জিহাদীদের প্রিয় অস্ত্র। কথিত "বড় হুজুর" দ্বারা পরিচালিত কওমি ছাত্ররা এর ব্যবহারকারী। সরকারী অনুমোদনপ্রাপ্ত।
বড় হুজুর - একটি রহস্যময় চরিত্র। সে যে কোথায় আছে, কোন দলে আছে, তা সাধারণ মানুষ জানে না, তার পাঠানো দুইজন গ্রেফতার হবার পরেও রয়ে যাচ্ছে অজানা।
বাক স্বাধীনতা - সরকার কর্তৃক রচিত একটি হাসির কৌতুক।
৫৭ ধারা-
এখানে এসে আমার কলম থেমে গেলো। নিবে কোন একটা সমস্যা হয়েছে। চুইয়ে চুইয়ে কালি পড়ছে। ভিজে যাচ্ছে আমার এতক্ষণ ধরে লেখা নির্ঘন্ট! এত কালি ছিলো কলমটায়! আমার নতুন লেখাটায় তো বটেই পুরোনো অনেক লেখাও ভেসে যাচ্ছে, এই সর্বগ্রাসী কালোয়। আমি কলমটাকে জানালা দিয়ে ছুড়ে ফেলে দেই। সবকিছু আবার নতুন করে লিখতে হবে। এবার আমি পাঁচ টাকার বলপেন রেখে পঞ্চাশ টাকার স্টেডলার কলম দিয়ে লেখা শুরু করি। কী কী যেন ছিলো নির্ঘন্টটায়? শেষেরটা মনে পড়ছে ,সাতান্ন ধারা। লেখা শুরু করা যাক তবে,
৫৭ ধারা- মিথ্যা, অশ্লীল অথবা মানহানিকর তথ্য প্রকাশ সংক্রান্ত অপরাধ ও এর দণ্ড সম্পর্কে বলা হয়েছে- '(এক) কোনো ব্যক্তি যদি ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যাহা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেহ পড়িলে, দেখিলে বা শুনিলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হইতে উদ্বুদ্ধ হইতে পারেন অথবা যাহার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করিতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উসকানি প্রদান করা হয়, তাহা হইলে তাহার এই কার্য হইবে একটি অপরাধ। (দুই) কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন অপরাধ করিলে তিনি অনধিক চৌদ্দ বছর এবং অন্যূন সাত বৎসর কারাদণ্ডে এবং অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।'
বেশ তো! এর আগে এমন ভজঘট পাকিয়ে গেল কেন তখন? পরবর্তী অধ্যায়ে যাই,
শেহা- বাঙলার লৌহমানবী। ধানকন্যা, গমকন্যা, সাগরকন্যা ইত্যাদি সম্মানসূচক পদবীতে ভূষিত।
বেজি- আপাতত গোলাপী ম্যাম, পরবর্তী সময়ে তাকে আপোষহীন নেত্রী বলার জোর সম্ভাবনা আছে।
বড় হুজুর- প্রকৃত জিহাদী।
ঋণখেলাপী- লোনের টাকা প্রদান করতে গড়িমসি করে সমজা স্ট্যাটাস বাড়ানো কিউট কোটিপতি।
বাক স্বাধীনতা- যা ইচ্ছে বলে গিলে কুলকুচি করে ফেলে দেয়া অথবা লিখে কুচিকুচি করে ছিড়ে ফেলে দেয়ার আনুগত্যময় আচরণ।
কর্পোরেট সংস্থা- জনগণের প্রভুতূল্য, টিনএজারদের বন্ধু-বান্ধব আর 'মাস্তি' ছাড়া জীবন বৃথা এই মহান মন্ত্রে দীক্ষিত করে তোলা বিশেষ গোষ্ঠী।
যাক, তখন পাতাটা নষ্ট হলেও এবার বেশ ভালোই লিখতে পারছি। নির্ঘন্ট লেখা প্রায় শেষ। খুব শিঘ্রই আমি মূল গল্পটা লেখা শুরু করবো। ততক্ষণে আমি কিছু ফুল-লতা-পাতা খেয়ে আসি। আপনি অবাক হচ্ছেন এই ভেবে যে, এসব কারো খাদ্য হতে পারে নাকি? কী যে বলেন আপনারা! আমি বেশি করে ডিম-মাংস-মাছ খেয়ে অহেতুক শক্তি সঞ্চয় করে ওসব রাষ্ট্রদ্রোহী এবং ভোগ্যবস্তুদের বিরুদ্ধে দুকলম লিখে জেলের ভাত খাই আর কী!
আচ্ছা আবার শুরু করি,
চাপাতি - নাস্তিক কাটার জন্যে সরকারের উদাসীন সম্মতিতে...
দেখেছেন! আবার কী সব ভুলভাল লিখছি। সম্ভবত রাত জাগার ফল। আমি দুঃখিত। এতখানি নির্ঘন্ট লিখেও মূল গল্পতে যেতে পারলাম না! আজ আর হবে না। ঘুমুতে যাবো। তবে ঘুমোনোও এক জ্বালা। মহল্লার চারিদিকে জাতির পিতার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানগুলোর শব্দে কান ফেটে যাচ্ছে। আমি নিজের অজান্তেই বলে ফেলি, ধুর! পরক্ষণেই নিজের ভুল বুঝতে পেরে চারিদিকে সন্তর্পণে তাকাই। নাহ, কেউ দেখে ফেলেনি, কেউ শোনে নি।। আমি বিছানায় গিয়ে বালিশটা কানের ওপরে দিয়ে ঘুমোনোর চেষ্টা করি।
ঘুম! ঘুমের মধ্যে একটা গিরগিটিকে স্বপ্নে দেখি। কেমন করে যেন সে দেহের রঙ পাল্টায়!
কুৎসিত। বড়ই কুৎসিত!

Comments

Popular posts from this blog

প্যাথেটিক হোমিওপ্যাথি, কেন বিশ্বাস রাখছেন!

মৃতবৎসা জোছনার কাল

তোমার জন্যে শুভ্র গোলাপ, বেড়ালতমা -হামিম কামাল