সে, ছায়ার দেয়াল, এবং অশ্রাব্য শব্দসমূহ
-শব্দটা কমিয়ে দাও। আমি ঘুমুবো।
সে বলল।
কিন্তু বিকট শব্দটা ক্রমশঃ বেড়েই চলেছে। আর কত সহ্য করা যায়!
-আমি তোমাকে কি বলেছি কানে গেছে? বন্ধ তো করতে বলিনি। একটু খালি কমিয়ে দাও।
এবার সে গলার স্বরটা একটু উচ্চগ্রামে ওঠালো।
রাতে ঘুমোবার সময় এত বিপত্তি মেনে নেয়াটা কঠিন। বেয়াড়া রুমমেটটাকে শায়েস্তা না করলেই নয়।
-লাথি খাবি কিন্তু বললাম।
কিন্তু কিসের কি! হিতে বিপরীত হল এতে। তার সঙ্গেরজন হুশ করে ভেগে গেলো। পুরো ঘরে যেন হেভি মেটাল কনসার্টের সাউন্ড সিস্টেম ইনস্টল করে গেছে। একগাদা ঢাউস স্পিকার, মাইক্রোফোন। আর বলার মানুষেরও বিরাম নেই।
চিৎকার করছে সবাই।
"Next time I will sack you" চিবিয়ে চিবিয়ে বলছে তার কোম্পানির ডেপুটি ডিরেক্টার।
ভাড়ার জন্যে তাগাদা দিচ্ছে বাসের নচ্ছার কনডাকটরটা।
সাবেক প্রেমিকার কন্ঠটা বেশি কর্কশ শোনাচ্ছে। সে কোন কথা বলছেনা, শুধু হেসেই চলেছে। হিহিহিহিহিহিহি।
অনেকদিন পরে দেখা হওয়া এক পুরোনো বন্ধুতো আরো এককাঠি সরেশ। সে মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে গম্ভীর কন্ঠে তার নতুন রচনা করা কবিতা আবৃত্তি করছে।
অসহ্য অসহ্য অসহ্য!
বালিশ কানে চাপা দিয়ে সে পরিত্রাণের পথ খুঁজলো, কিন্তু এই অদ্ভুত শব্দদূষণ থেকে তার মুক্তি নেই।
এবার সে উঠে দাঁড়ালো।
"আপনার sack এর নিকুচি করি"
"আরে কয়বার দিমু ভাড়া"
"চুপ খানকি, এক্কেবারে..." ফুঁসতে ফুঁসতে শেষপর্যন্ত কিভাবে যেন নিজেকে আরো খারাপ কিছু বলা থেকে নিবৃত্ত করলো।
"তোর কবিতার খ্যাতা পুড়ি, আমি ঘুমাবোনা?"
একটানে সে ছিড়ে ফেললো কবি বন্ধুর কবিতার খাতা।
বেশ শিক্ষা দেয়া হয়েছে, ভাবলো সে।
তারিয়ে তারিয়ে দেখছে হতভম্ব ঊর্ধতন কর্মকর্তা, মারমুখি শ্রমজীবী, কাঁদোকাঁদো প্রেমিকা আর ভ্যাবলাটে কবি বন্ধুর মুখ।
"আর বিরক্ত না করলেই খুশী হব, লজ্জা থাকলে আর এ মুখো হবেননা কেউ।" হুমকি দিলো সে।
সবাই পাংশু মুখ করে চলে গেলো। যার যার মাইক্রোফোন এবং আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি নিয়ে।
এবার ঘুমুনো যায়। সে ভাবলো। কিন্তু একা একা ঘুমুতে ভালো লাগেনা যে তার! সেই ছোটবেলা থেকে মায়ের কোল ঘেষে, আরেকটু বড় হবার পরে বড়ভাইটার সাথে গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে যাওয়া...এসব মনে করে বড় একা আর বিপন্ন লাগে তার।
আজকে রাত্তিরে তারা কেউ আসেনি। কখনও আসেওনা। কিন্তু প্রতিদিন ঘুমুনোর সময় ঐসব উটকো লোকজনের উদ্ভট হ্যাপা ঠিকই সহ্য করতে হয়।
উদ্ধত বাড়িওয়ালা আসে।
মা আসেনা।
অহংকারী সহকর্মীনি এসে দু কথা শুনিয়ে যায় খুব ডাঁট করে।
মা আর গল্প শোনায়না।
বড় ভাইয়ের সাথে রাত জেগে গল্প করা হয়না।
চিরনৈঃশব্দ্যের দেশের মানুষেরা বড় নিষ্ঠুর হয়। খুব নিষ্ঠুর।
যাক, ওসব ভেবে কি হবে, আর ঘুমটাও তো চটে গেছে, রুমমেটের সাথে একটু গল্প করতে পারলে হত। কিন্তু সে ব্যাটা তো গ্যাঞ্জাম লাগিয়ে দিয়ে ভাগলো। কি ভীতু! ভয় পেয়েছে হয়তো।
তার খুব একা লাগে।
"এই কোথায় গেলি তুই" গলা চড়িয়ে ডাকে সে।
"আরে ফিরে আয়, কিচ্ছু বলবোনা তোকে"
এই আশ্বাসে মনে হয় তার সঙ্গীটা সাহস পায় একটু। গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে আসে।
এতক্ষণে তার ছায়া পরে মেঝেতে। মোমবাতির আলোতে একাকী যুবকের ছায়াটা বড় অদ্ভুত দেখায়...।
সে বলল।
কিন্তু বিকট শব্দটা ক্রমশঃ বেড়েই চলেছে। আর কত সহ্য করা যায়!
-আমি তোমাকে কি বলেছি কানে গেছে? বন্ধ তো করতে বলিনি। একটু খালি কমিয়ে দাও।
এবার সে গলার স্বরটা একটু উচ্চগ্রামে ওঠালো।
রাতে ঘুমোবার সময় এত বিপত্তি মেনে নেয়াটা কঠিন। বেয়াড়া রুমমেটটাকে শায়েস্তা না করলেই নয়।
-লাথি খাবি কিন্তু বললাম।
কিন্তু কিসের কি! হিতে বিপরীত হল এতে। তার সঙ্গেরজন হুশ করে ভেগে গেলো। পুরো ঘরে যেন হেভি মেটাল কনসার্টের সাউন্ড সিস্টেম ইনস্টল করে গেছে। একগাদা ঢাউস স্পিকার, মাইক্রোফোন। আর বলার মানুষেরও বিরাম নেই।
চিৎকার করছে সবাই।
"Next time I will sack you" চিবিয়ে চিবিয়ে বলছে তার কোম্পানির ডেপুটি ডিরেক্টার।
ভাড়ার জন্যে তাগাদা দিচ্ছে বাসের নচ্ছার কনডাকটরটা।
সাবেক প্রেমিকার কন্ঠটা বেশি কর্কশ শোনাচ্ছে। সে কোন কথা বলছেনা, শুধু হেসেই চলেছে। হিহিহিহিহিহিহি।
অনেকদিন পরে দেখা হওয়া এক পুরোনো বন্ধুতো আরো এককাঠি সরেশ। সে মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে গম্ভীর কন্ঠে তার নতুন রচনা করা কবিতা আবৃত্তি করছে।
অসহ্য অসহ্য অসহ্য!
বালিশ কানে চাপা দিয়ে সে পরিত্রাণের পথ খুঁজলো, কিন্তু এই অদ্ভুত শব্দদূষণ থেকে তার মুক্তি নেই।
এবার সে উঠে দাঁড়ালো।
"আপনার sack এর নিকুচি করি"
"আরে কয়বার দিমু ভাড়া"
"চুপ খানকি, এক্কেবারে..." ফুঁসতে ফুঁসতে শেষপর্যন্ত কিভাবে যেন নিজেকে আরো খারাপ কিছু বলা থেকে নিবৃত্ত করলো।
"তোর কবিতার খ্যাতা পুড়ি, আমি ঘুমাবোনা?"
একটানে সে ছিড়ে ফেললো কবি বন্ধুর কবিতার খাতা।
বেশ শিক্ষা দেয়া হয়েছে, ভাবলো সে।
তারিয়ে তারিয়ে দেখছে হতভম্ব ঊর্ধতন কর্মকর্তা, মারমুখি শ্রমজীবী, কাঁদোকাঁদো প্রেমিকা আর ভ্যাবলাটে কবি বন্ধুর মুখ।
"আর বিরক্ত না করলেই খুশী হব, লজ্জা থাকলে আর এ মুখো হবেননা কেউ।" হুমকি দিলো সে।
সবাই পাংশু মুখ করে চলে গেলো। যার যার মাইক্রোফোন এবং আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি নিয়ে।
এবার ঘুমুনো যায়। সে ভাবলো। কিন্তু একা একা ঘুমুতে ভালো লাগেনা যে তার! সেই ছোটবেলা থেকে মায়ের কোল ঘেষে, আরেকটু বড় হবার পরে বড়ভাইটার সাথে গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে যাওয়া...এসব মনে করে বড় একা আর বিপন্ন লাগে তার।
আজকে রাত্তিরে তারা কেউ আসেনি। কখনও আসেওনা। কিন্তু প্রতিদিন ঘুমুনোর সময় ঐসব উটকো লোকজনের উদ্ভট হ্যাপা ঠিকই সহ্য করতে হয়।
উদ্ধত বাড়িওয়ালা আসে।
মা আসেনা।
অহংকারী সহকর্মীনি এসে দু কথা শুনিয়ে যায় খুব ডাঁট করে।
মা আর গল্প শোনায়না।
বড় ভাইয়ের সাথে রাত জেগে গল্প করা হয়না।
চিরনৈঃশব্দ্যের দেশের মানুষেরা বড় নিষ্ঠুর হয়। খুব নিষ্ঠুর।
যাক, ওসব ভেবে কি হবে, আর ঘুমটাও তো চটে গেছে, রুমমেটের সাথে একটু গল্প করতে পারলে হত। কিন্তু সে ব্যাটা তো গ্যাঞ্জাম লাগিয়ে দিয়ে ভাগলো। কি ভীতু! ভয় পেয়েছে হয়তো।
তার খুব একা লাগে।
"এই কোথায় গেলি তুই" গলা চড়িয়ে ডাকে সে।
"আরে ফিরে আয়, কিচ্ছু বলবোনা তোকে"
এই আশ্বাসে মনে হয় তার সঙ্গীটা সাহস পায় একটু। গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে আসে।
এতক্ষণে তার ছায়া পরে মেঝেতে। মোমবাতির আলোতে একাকী যুবকের ছায়াটা বড় অদ্ভুত দেখায়...।
Comments
Post a Comment