প্রিয় ব্যান্ডের প্রতি লয়ালিটি দেখাতে গিয়ে তাদেরকে নিচে নামাচ্ছো কেন?



(বাংলাদেশী ব্যান্ড মিউজিকের এক গ্রুপে বিভিন্ন ব্যান্ডের সমর্থকগোষ্ঠীর মধ্যে ঝগড়া লেগেছে, সেখানে কমেন্ট করতে গিয়ে বড় একটা লেখা হয়ে গেলো!)
আমি বাংলা ব্যান্ডের পোড় খাওয়া এক শ্রোতা। আমার কথাগুলি একটু মনোযোগ দিয়ে শোনার আহবান জানাই আমার অনুজদের।
আমি সোলসে যখন তপন চৌধুরি, আইয়ুব বাচ্চু, কুমার বিশ্বজিতেরা ছিলেন, চাইমে যখন আশিকুজ্জামান টুলু ভাই ছিলেন, যখন খালিদ চাইমের প্রথম এ্যালবামে নাতি খাতি বেলা গেলো দিয়ে সারাদেশে সবার প্রিয় হয়েছেন, সেই সময়টা দেখেছি। একটা সময় বাংলাতেও মেটাল এলো। আরে, কী আজব ব্যাপার! ওয়ারফেইজ, রকস্ট্রাটা রক্তে নেশা ধরিয়ে দিলো। এলআরবি নিয়ে এলো লিরিকে বিপ্লব, আর প্রমিথিউসের বিপ্লব সেই সময় যে লিরিকে গান করতো, তা এখন হলে জেল খাটার সম্ভাবনা ছিলো। মাইলসের গানের লিরিক অবশ্য খুবই সাদামাটা, আমি-তুমি ছাড়া কিছু নেই, কিন্তু তারা সুর আর মিউজিক দিয়ে জাদু করতে জানতো। পার্থ বড়ুয়া-চারুরা আবার র‍্যাপ করা শুরু করলো, এ এক নতুন ব্যাপার! মাকসুদ-ফোয়াদ নাসের বাবু-লাবু-পিয়ারু ভাইরা তখন নতুন নতুন সব ব্যাপার ঘটাচ্ছেন!.আর্কের মাঝারি মাপের হিট প্রথম এ্যালবামের পর টুলু হাসানকে নিয়ে এসে দ্বিতীয় এ্যালবামে চমকে দিলেন সবাইকে।
এর মধ্যে বালাম-হাবিব আন্ডারগ্রাউন্ডে ঝড় তুলেছেন রেনিগেইডস দিয়ে। বোনানজা নামের এক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অদ্ভুত সব এ্যালবাম নিয়ে আসলো। রেনিগেইডসের প্রথম এ্যালবাম, লিজেন্ডের একমাত্র এ্যালবাম (মাইলস এবং এক্স ফ্যাক্টরসের ইকবাল আসিফ যার ভোকাল ছিলেন),ঝড় নামের একটা মিক্সড এ্যালবাম , যেখানে অর্থহীনের সুমনের প্রথম গান ছিলো সম্ভবত, ফয়সাল নামের আরেকজন ছিলেন সেই গানে তার সাথে, গেয়েছিলেন এইসেস ব্যান্ডের ব্যানারে। বোনানজা কয়েকটি এ্যালবাম করার পর হারিয়ে গেল। আন্ডারগ্রাউন্ড মুখ থুবড়ে পড়লো।
এরপর পিক টাইম! এলআরবি, মাইলস,আর্ক, নগর বাউল (তখন ফিলিংস নামে ছিলো), ফিডব্যাক, ফিডব্যাক থেকে বের হয়ে এসে মাকসুদের ঢাকা, সবাই পাল্লা দিয়ে ভালো করছে। আমাদের মাথা খারাপ অবস্থা!
এরপরই শুরু পতনের। হরেদরে মিক্সড এ্যালবাম করে নিজেদের স্বকীয়তার সাথে কম্প্রোমাইজ করলেন অনেক নক্ষত্র।
তার কিছুদিন পর আবার আন্ডারগ্রাউন্ড বিস্ফোরণ! আর্টসেল, ব্ল্যাক, মেটাল মেইজ, দূরে ভাইয়ের আয়োজনে মিক্সড এ্যালবাম ছাড়পত্র আর অনুশীলন আমাদের নতুন অবলম্বন দিলো। ধীরে ধীরে আন্ডারগ্রাউন্ড মেইনস্ট্রিমে আসা শুরু করলো।
এত কথা কেন বললাম এই পোস্টের কমেন্টে? বললাম এটা বোঝাতে, যখন যা পেয়েছি, যা ভালো লেগেছে, আঁকড়ে ধরেছি। এমন ছিলো না যে আইয়ূব বাচ্চুর গান বেশি ভালো লাগে বলে জেমস আমার শত্রু! এমন ছিলো না, যে আমি খালিদের নাতি খাতি বেলা গেলো শুনে মাথা দোলাই দেখে আমি ওয়ারফেইজ শুনতে পারবো না। আমার সবচেয়ে প্রিয় শিল্পী আইয়ূব বাচু। অর্থহীনের সুমন তাকে আক্রমণ করে নানা কথা বলেছে, গানও করেছে, এতে তার প্রতি আমার সম্মান কমলেও তার গানের প্রতি কমে নি। গান শোনার ক্ষেত্রে কে কার শত্রু, কে কাকে কী বলেছে এসব ভেবে নিজেকে ঠকাই না।
এবার আসি এ্যাশেজ প্রসঙ্গে। এ্যশেজের গান আমি শুনি ২০১৩ এর দিকে। কেমন আছো, কী আর হবে, এই গানদুটি লুপ করে শুনেছি অনেকবার। সতের পৃষ্ঠা গানটাও যথেষ্ট ভালো। কিন্তু বাদবাকি গানগুলোতে অনেকটাই একঘেয়েমী চলে আসে আমার। তাই এই দুই-তিনটি গান বাদে বাকি গান তেমন শোনা হয় নি।
তো এ্যাশেজের গান শোনার বহুদিন পরে আমি জানতে পারলাম যে এই ব্যান্ডের গান নাকি ক্লাসলেস(!) কামলা(!)রা শোনে। এই জিনিসগুলো চরম বিরক্তিকর লাগে। ঠিক আছে, এ্যাশেজের অনেক ভক্ত তাদের শোনার সীমাবদ্ধতার কারণে শুধুমাত্র তাদেরকে মিউজিকের রাজা বানিয়ে দিয়েছে। ওকে, তাদের ভক্তদের ট্রল করো! কিন্তু তাই বলে এ্যাশেজের গান শুনবা না এই পণ করেছো কেন? এটা হাস্যকর না?
আমি এ্যাশেজ শুনি, এ্যাশেজের বিরুদ্ধপক্ষ ক্রিপটিক ফেইট শুনি, ক্রিপটিক ফেইটের বিরুদ্ধপক্ষ এলে তাদেরটাও শুনবো।
আমি শান্তিমত গান শুনতে চাই। যারটা ভালো লাগে তারটাই শুনবো। যারটা ভালো লাগবে না বাদ দিবো। শ্রোতাগোষ্ঠীদের দলে-উপদলে ভাগ হয়ে মারামারি-গালাগালির মত হাস্যকর ব্যাপারে কোনদিন আগ্রহ ছিলো না থাকবেও না।

Comments

Popular posts from this blog

প্যাথেটিক হোমিওপ্যাথি, কেন বিশ্বাস রাখছেন!

ইলুমিনাতি, একটি মার্কেটিং টুল; অথবা ছহি ইলুমিনাতি শিক্ষা

জ্বী না, সিয়েরালিওনের দ্বিতীয় ভাষা বাংলা নয়!